সিলেটের পাথর লুট: ৮০ কোটি টাকা কমিশন ডিসি-এসপির পকেটে

সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে সম্প্রতি সংঘটিত ব্যাপক পাথর লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশ বেরিয়ে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং একাধিক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই লুটপাটে প্রায় ৮০ কোটি টাকা কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাথর লুটপাটে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ প্রশাসনের প্রায় সব স্তরের কর্মকর্তাদের সরাসরি মদদ ছিল। এমনকি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং পুলিশের বিশেষ ইউনিট পুলিশ ইন্টার্নাল ওভারসাইটের (পিআইও) কর্মকর্তারাও এই কমিশন থেকে ভাগ পেয়েছেন।

বিকট শব্দের বাইক চালানোয় গ্রামবাসীদের ক্ষোভ: রাজশাহীতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

বিস্তারিত পড়ুন

প্রতি ট্রাকে ১০ হাজার টাকা করে কমিশন নেওয়া হতো। এর বিনিময়ে তিনটি শর্ত ছিল: পাথরের ট্রাক আটকানো হবে না, অভিযান চালানো হবে না এবং অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। স্থানীয় পরিবেশবাদীদের মতে, প্রায় ৪ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যা থেকে ৮০ হাজার ট্রাকের মাধ্যমে প্রায় ৮০ কোটি টাকা কমিশন ঢুকেছে।

লুটপাটে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ ৪২ জন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সরাসরি জড়িত ছিলেন। প্রতিবেদনে তাদের বিস্তারিত নাম ও পদবি উল্লেখ করা হয়েছে, যারা এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেছেন।

দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন তাদের প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছেছে এবং আগামী সপ্তাহে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিলেট জেলা প্রশাসনও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা তাদের প্রতিবেদনে ১৩৭ জনের একটি তালিকা দাখিল করেছে এবং পাথর লুট বন্ধে ১০টি সুপারিশ পেশ করেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধেও পাথর উত্তোলনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ৪৮ বিজিবি সিলেট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিজিবি একটি অভিযান চালিয়েছিল, যার প্রতিশোধ হিসেবে কিছু অসাধু ব্যক্তি এই ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।