আগস্ট ২১, ২০২৫, ১০:৪৭ এএম
ইসলাম ধর্মে হজরত নূহ (আ.)-কে 'আদমে সানী' বা 'দ্বিতীয় মানব' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দীর্ঘ ৯৫০ বছর ধরে তার জাতিকে এক আল্লাহর পথে আহ্বান করার পরেও যখন তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছিল, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তাদের বিষয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন। এই আবেদন ছিল তাদের সীমালঙ্ঘনের চূড়ান্ত ফল।
নূহ (আ.)-এর ধৈর্য ও সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা: নূহ (আ.)-এর জাতি ছিল চরম অবাধ্য এবং খোদাদ্রোহী। তারা নূহ (আ.)-এর কথায় কান দিত না, বরং তাকে উপহাস করত এবং নির্যাতন করত। তাদের নির্যাতনে তিনি প্রায়শই রক্তাক্ত ও জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়তেন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। শত শত বছর ধরে তিনি মানুষকে শুধু এই আশায় আহ্বান করেছেন যে, হয়তো কোনো এক প্রজন্ম আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে। কিন্তু তাদের অবাধ্যতা বেড়েই চলছিল।
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া: যখন নূহ (আ.) বুঝতে পারলেন যে তার জাতি আর কোনোদিন ঈমান আনবে না, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে এই সাহায্যের কথা উল্লেখ আছে:
قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا كَذَّبُوۡنِ
"নূহ বলেছিলেন, হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন, কারণ তারা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।" (সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ২৬)
আরেকটি আয়াতে তিনি বলেছিলেন:
"আর নূহ বললো, হে আমার রব! এ পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য থেকে একজন অধিবাসীকেও ছেড়ে দিবেন না। যদি আপনি তাদেরকে থাকতে দেন তাহলে তারা আপনার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে এবং তাদের বংশ থেকে কেবল দুষ্কৃতকারী ও সত্য অস্বীকারকারীরই জন্ম হবে।" (সুরা নূহ, আয়াত: ২৬–২৭)
নূহ (আ.) বুঝেছিলেন যে তার জাতির অবাধ্যতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা শুধু নিজেরাই পথভ্রষ্ট হচ্ছে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও পথভ্রষ্ট করবে। এই কারণেই তিনি আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত বিচার চেয়েছিলেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে প্লাবনের নির্দেশ: নূহ (আ.)-এর দোয়া কবুল করে আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি নৌকা তৈরির নির্দেশ দিলেন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এক মহাপ্লাবন শুরু হয়, যা পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগকে ডুবিয়ে দেয়। শুধুমাত্র নূহ (আ.)-এর নৌকার আরোহী, অর্থাৎ মুমিন বান্দা এবং জোড়া জোড়া প্রাণী ছাড়া পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। প্লাবন শেষে পৃথিবীর নতুন করে মানববসতি শুরু হয় নূহ (আ.)-এর মাধ্যমেই।