বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

মাদক ও সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম

মাদক ও সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান

ছবি- সংগৃহীত

মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। বুধবার (২৩ জুলাই, ২০২৫) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী-র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মোহসিন রেজা নাগভি এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।


বৈঠকে মাদক ও সন্ত্রাস দমনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও পুলিশ প্রশিক্ষণে সহযোগিতা, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ, এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে।" এসময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

  • অন অ্যারাইভাল ভিসা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান যে, দুই দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করবে এবং সম্পর্ককে আরও গতিশীল করবে।

  • দূতাবাস ভবন নির্মাণ: পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বর্তমানে সেখানে এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম চালু আছে। দূতাবাসের ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হলে সেখানে ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।

  • সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা: সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন রেজা নাগভি বলেন, "আমরা সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। সেখানে আমরা ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানসহ সবার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে।"

  • মাদক সমস্যা মোকাবিলা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশেরও অন্যতম প্রধান সমস্যা মাদক, যা আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে পাচার হয়। মাদক সমস্যা দূরীকরণে দুদেশ পারস্পরিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে।" এই আলোচনা মাদকের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

  • পুলিশ প্রশিক্ষণে সহযোগিতা: পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। উপদেষ্টা এই প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন এবং জানান যে, সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পুরাতন ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এটি পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

  • রোহিঙ্গা ইস্যু: রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দিলেও ভিন্ন কোডে পাসপোর্ট দিচ্ছি যাতে তাদের আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায়।" এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আমরা মানবতার খাতিরে ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি, যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বোঝা।" উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন।

বৈঠকের শেষে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। এসময় তিনি উত্তরায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জানান।

এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ ওয়াসিফ। এই আলোচনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।