মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সাবেক সচিব সাত্তারের বক্তব্য ‘বিএনপির নয়’

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১১, ২০২৫, ১০:৪৮ এএম

সাবেক সচিব সাত্তারের বক্তব্য ‘বিএনপির নয়’

ছবি- সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সাবেক সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তার এই বক্তব্যকে ‘নিজস্ব’ আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে, অন্তর্বর্তী সরকারও আবদুস সাত্তারের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রমাণ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে শনিবার (৯ আগস্ট, ২০২৫) গভীর রাতে করা বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সততার ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন।

আবদুস সাত্তারের বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, "আমি বলতে চাই, হুইচ ইজ নট আওয়ার্স। এটার সঙ্গে আমাদের (বিএনপি) কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ এই অন্তর্বর্তী সরকারের সব উপদেষ্টাকে অত্যন্ত সম্মান করি এবং তাঁদের ওপর আস্থা, তাঁদের ইনটিগ্রিটির (সততা) ওপর আমরা আস্থা রাখি।"

মির্জা ফখরুল আরও স্পষ্ট করে বলেন, "ওই বক্তব্যের দায় সম্পূর্ণভাবে ওনার (আবদুস সাত্তার) নিজের। দলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।"

উল্লেখ্য, আবদুস সাত্তার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। তিনি আওয়ামী লীগের আমলে যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান এবং অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে সচিব করা হয়। আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি অফিসার্স ক্লাবের (সরকারি কর্মকর্তাদের ক্লাব) সাধারণ সম্পাদক হন এবং বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি পদেও রয়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।

কয়েকজন উপদেষ্টার দুর্নীতি নিয়ে আবদুস সাত্তার গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন' শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। সেখানে নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে **‘সীমাহীন দুর্নীতি’**র অভিযোগ করেন আবদুস সাত্তার।

তবে আবদুস সাত্তারের বিরুদ্ধেই সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ থাকা অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে সরকারের নানা পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া হয়।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে শনিবার একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বিবৃতিতে বলা হয়, "সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে; যেখানে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এ বি এম আবদুস সাত্তার নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। আমরা এই অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রমাণ উপস্থাপন বা ব্যক্তিদের শনাক্ত না করে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জন আস্থার জন্য ক্ষতিকর।"

বিবৃতিতে আবদুস সাত্তারের কাছে সব প্রমাণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, "আমাদের প্রশাসন স্বচ্ছতা, সততা এবং জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি আবদুস সাত্তারের কাছে কোনো অসদাচরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকে, আমরা তাঁকে যথাযথ আইনগত ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তা দ্রুত জমা দেওয়ার আহ্বান জানাই।"

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আবদুস সাত্তার গতকাল রবিবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত কোনো প্রমাণ জমা দেননি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার কাছে তথ্য-প্রমাণ আছে এবং তিনি তা জমা দেবেন, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি।

শনিবার বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনও একটি বিবৃতি দেয়, যেখানে বলা হয় যে, শুক্রবারের সেমিনারের মূল প্রবন্ধ ও বিষয়বস্তুর বাইরে গিয়ে দু-একটি গণমাধ্যম উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য নয়। অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীও শনিবার রাতে জানান, আবদুস সাত্তার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি একান্তই তাঁর নিজের বক্তব্য।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন গতকাল আরেকটি বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানায় যে, আবদুস সাত্তার উপদেষ্টাদের নিয়ে যে মতামত দিয়েছেন, তা একান্তই তাঁর নিজস্ব বক্তব্য এবং অ্যাসোসিয়েশন এ বক্তব্যকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।