শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

জামায়াতের সমাবেশ: সাংস্কৃতিক আয়োজনে শুরু, মূল রাজনৈতিক বার্তা দুপুরে

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২৫, ০১:১৭ পিএম

জামায়াতের সমাবেশ: সাংস্কৃতিক আয়োজনে শুরু, মূল রাজনৈতিক বার্তা দুপুরে

সংগৃহীত

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার সকাল থেকে এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। তীব্র রাজনৈতিক উত্তাপের আবহের মধ্যেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বহু প্রতীক্ষিত জাতীয় সমাবেশ শুরু হয়েছে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, নাত ও অন্যান্য ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ১০০ ফুট দীর্ঘ বিশাল মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, যা দুপুর ২টায় মূল রাজনৈতিক অধিবেশন শুরুর আগে পর্যন্ত চলবে। এই আয়োজনকে বিশ্লেষকরা একটি জনাকীর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির সুশৃঙ্খল সূচনা হিসেবে দেখছেন।

গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এটিই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের প্রথম একক জাতীয় সমাবেশ, যাকে কেন্দ্র করে দলটির সাংগঠনিক সক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রদর্শনী চলছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনস্রোত শাহবাগ, টিএসসি ও মৎস্য ভবন এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১০ হাজার বাস, একাধিক রিজার্ভ ট্রেন ও লঞ্চে করে আসা লাখো নেতাকর্মীর পরনে রয়েছে দলীয় মনোগ্রাম সম্বলিত টি-শার্ট ও মাথায় রঙিন ফিতা। তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে জাতীয় পতাকা ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’। ১৫ লাখ লোকসমাগমের লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই সমাবেশে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে হাজার হাজার দলীয় স্বেচ্ছাসেবক।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সমাবেশের আয়োজন ও বিন্যাস অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক। দিনের শুরুতে কয়েক ঘণ্টা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে দলটি মূলত দুটি বার্তা দিচ্ছে। প্রথমত, একটি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের নতুন ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় ধরে উপস্থিত থাকা বিশাল জনতাকে মূল রাজনৈতিক বার্তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। সমাবেশ থেকে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে যে ‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’ দেবেন, তার কেন্দ্রে থাকবে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়া এবং সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো।

এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ সমমনা ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ দল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতাকে সকালের পর্বে দেখা যায়নি, তবে বিভিন্ন সহযোগী দলের মধ্যম সারির নেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সমাবেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য রাজনৈতিক দর-কষাকষির একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি করবে। সকালের শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের পর, এখন সবার দৃষ্টি দুপুর ২টার দিকে, যখন দলের আমির তার ভাষণের মাধ্যমে আগামী দিনের রাজনীতিতে দলের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা স্পষ্ট করবেন। তার ভাষণই নির্ধারণ করে দেবে জাতীয় রাজনীতিতে জামায়াত নতুন কোনো আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারবে কি না।