বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

অবৈধ সম্পদে উপার্জিত অর্থ ব্যবহার করা যাবে?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম

অবৈধ সম্পদে উপার্জিত অর্থ ব্যবহার করা যাবে?

ছবি- সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মে হালাল উপার্জনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেকোনো প্রকার অবৈধ উপার্জিত সম্পদ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে, দৈনন্দিন জীবনে এমন প্রশ্ন প্রায়শই উত্থাপিত হয় যে, যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধ উপার্জনের অর্থ দিয়ে কোনো সম্পদ ক্রয় করে এবং সেই সম্পদ থেকে আয় করে, তাহলে সেই আয় হালাল হবে কি না? অথবা, সেই অবৈধ অর্থ দিয়ে যদি কোনো জনহিতকর কাজ করা হয়, তার সওয়াব পাওয়া যাবে কি না? এই প্রশ্নগুলোর ইসলামিক ব্যাখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অবৈধ সম্পদে উপার্জিত অর্থ ব্যবহার করা যাবে কিনা—এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে ইসলামি শরিয়াতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর প্রকাশিত হয়েছে, যা অবৈধ সম্পদের প্রকারভেদ এবং তা থেকে অর্জিত অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।

প্রশ্ন: কেউ যদি চুরি করা টাকা বা অবৈধ টাকা দিয়ে রিকশা কিনে তা ভাড়ায় বা নিজে চালায় এবং টাকা ইনকাম করে সেটা কি হারাম? ওই টাকা দিয়ে যদি বৃক্ষ রোপণ করে তাহলে সেই বৃক্ষের ফলও কি হারাম?

উত্তর: ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী, অবৈধ সম্পদ মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে:

১. প্রথম প্রকার (আল্লাহর হক অমান্য করে অর্জিত সম্পদ): এটি হলো আল্লাহর হুকুম অমান্য করে অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ। যেমন—সুদের কারবার করে গড়া সম্পদ, মদ বিক্রি করে উপার্জিত সম্পদ, নাচ-গান করে প্রাপ্ত সম্পদ, দেহ ব্যবসা করে প্রাপ্ত সম্পদ, জুয়াবাজি থেকে প্রাপ্ত সম্পদ।

এই প্রথম প্রকারের হারাম সম্পদ দিয়ে রিকশা ক্রয় করে ওই রিকশা চালিয়ে উপার্জন করলে উপার্জিত সম্পদ সম্পর্কে ওলামাদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহসহ আরবের অনেক আলেমদের মত হলো—এই হারাম রিকশা কিংবা হারাম সম্পদের পেছনে মেহনত করে উপার্জিত মুনাফা ভোগ করা যাবে। কেননা এই মুনাফা অর্জনের পেছনে রয়েছে তার শ্রম, সময় ও মেধা। তাই এই মুনাফা সেই ভোগ করতে পারবে। তবে, মূল পুঁজি হিসেবে যেই হারাম সম্পদ কাজে লাগিয়েছিল, সেটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজের মালিকানা থেকে বের করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সাদাকা করে দেবে। যদিও সাবধানতা এবং তাকওয়ার মাসআলা হলো এখান থেকে উপার্জিত সম্পদও ভোগ না করা।

২. দ্বিতীয় প্রকার (বান্দার হক নষ্ট করে গড়া সম্পদ): এটি হলো বান্দার হক নষ্ট করে গড়া সম্পদ। যেমন—ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, জবরদখল করে বানানো সম্পদ।

এই দ্বিতীয় প্রকারের সম্পদ কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জন করলে মূল পুঁজি ও মুনাফা উভয়টাই মালিকের কাছে ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার শ্রমের বিনিময় মালিকের কাছ থেকে কিছু চেয়ে নেওয়া অসঙ্গত হবে না। যেমন, কারো জমি জবরদখল করে সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে চাষাবাদ করলো এবং জমিনে ফসল হলো। এখানে মূল মাসআলা হলো, জমিন এবং ফসল সবটাই মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া। তবে নিজের থেকে যেটুকু অর্থ বের করেছে এবং যা শ্রম দিয়েছে সেটুকু মালিকের কাছ থেকে চেয়ে নিতে অসুবিধে নেই।

প্রশ্নের আলোকে জবাব: আপনার প্রশ্নের বর্ণিত রিকশা এবং বৃক্ষ যদি প্রথম প্রকারের হারাম মাল হয়ে থাকে, তাহলে ওই বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত ফল এবং রিকশা চালিয়ে অর্জিত ধন ভোগ করা যেতে পারে। আর যদি এই রিকশা চুরি করে আনা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে রিকশা এবং তার মাধ্যমে উপার্জিত টাকা সবই মালিকের কাছে ফেরত দিতে হবে। অবশেষে রিকশা চালানোর জন্য নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু চেয়ে নিতে পারবে।

এই ফতোয়াটি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে।