মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

আল্লাহর ভয়ে এক ব্যক্তির বিস্ময়কর কাণ্ড

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১২, ২০২৫, ১০:১৭ এএম

আল্লাহর ভয়ে এক ব্যক্তির বিস্ময়কর কাণ্ড

ছবি- সংগৃহীত

এই হাদিসটি মানুষের নিজের প্রতি দায়বদ্ধতা, তাওবাহ এবং মহান আল্লাহর অসীম রহমত ও ক্ষমা সম্পর্কে এক বিরাট শিক্ষা বহন করে। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

এমন এক ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে বলল, যে কখনো কোনো ভালো কাজ করেনি (অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি নিজের ওপর অবিচার করেছে)। মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে সে তার সন্তান-সন্ততিকে অসিয়ত করল, যখন সে মারা যাবে তাকে যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। অতঃপর মৃতদেহের ছাই-ভস্মের অর্ধেক স্থলভাগে, আর অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহর কসম! যদি তিনি (আল্লাহ) তাকে ধরতে পারেন, তাহলে এমন শাস্তি দেবেন, যা দুনিয়ার কাউকেও কক্ষনো দেননি। সে মারা গেলে তার সন্তানেরা তার নির্দেশ মতোই কাজ করল। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা সমুদ্রকে হুকুম করলেন, সমুদ্র তার মধ্যে যা ছাই-ভস্ম পড়েছিল সব একত্র করে দিল। ঠিক এভাবে স্থলভাগকে নির্দেশ করলেন, স্থলভাগ তার মধ্যে যা ছাই-ভস্ম ছিল সব একত্র করে দিল। পরিশেষে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কেন এরূপ কাজ করলে?" (উত্তরে বললো) "তোমার ভয়ে, হে রব! তুমি তো তা জানো।" তার এ কথা শুনে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

(বুখারি, হাদিস ৭৫০৬; মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৬; মুয়াত্ত্বা মালিক, হাদিস : ৮২২)

এই হাদিসটি আমাদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ধারণ করে:

  • আল্লাহর প্রতি প্রগাঢ় ভয় ও বিশ্বাস: হাদিসের ব্যক্তিটি যদিও সারা জীবন কোনো ভালো কাজ করেনি, কিন্তু তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি গভীর ভয় ছিল। এই ভয় এতটাই প্রবল ছিল যে, সে বিশ্বাস করত আল্লাহ তাকে শাস্তি দিতে সক্ষম এবং সে চেষ্টা করেছিল আল্লাহর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে, যা তার নিদারুণ ভয়েরই বহিঃপ্রকাশ। এই ভয়ই তার ক্ষমার কারণ হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের ভয় (খাশিয়াহ) ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  • আল্লাহর অসীম ক্ষমতা: লোকটি নিজেকে পুড়িয়ে ছাই করে সমুদ্রে ও স্থলভাগে ছড়িয়ে দিতে বলেছিল, যেন আল্লাহ তাকে একত্র করতে না পারেন। কিন্তু আল্লাহ তার অসীম ক্ষমতা বলে সমুদ্র ও স্থলভাগের ছাই-ভস্মকে একত্র করে তাকে জীবিত করলেন। এটি আল্লাহর কুদরতের এক জ্বলন্ত প্রমাণ যে, তিনি সবকিছুতে সক্ষম এবং তার ক্ষমতা কোনো সীমা দ্বারা আবদ্ধ নয়।

  • তাওবাহ ও অন্তরের অবস্থা: লোকটির বাহ্যিক আমল ভালো না থাকলেও, তার অন্তরের সত্যিকারের ভয় এবং আল্লাহর প্রতি ফিরে আসার আকুতি ছিল। সে তার অসিয়তের মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল, যা তার অনুতাপ এবং ভয়কেই প্রতিফলিত করে। আল্লাহ মানুষের আমলের পাশাপাশি তাদের অন্তরের অবস্থা, নিয়ত এবং সত্যিকারের বিশ্বাসকেও দেখেন। ক্ষমা লাভের জন্য কেবল বাহ্যিক আমলই যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহর প্রতি বিনয় ও আত্মসমর্পণের মনোভাবও জরুরি।

  • ক্ষমা ও রহমত: এই হাদিস আল্লাহর অসীম রহমত ও ক্ষমার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লোকটি কোনো নেক আমল না করা সত্ত্বেও, কেবল আল্লাহর প্রতি তার গভীর ভয় ও অসহায়ত্বের স্বীকারোক্তির কারণে ক্ষমা লাভ করে। এটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ মানুষের ক্ষুদ্র দুর্বলতা বা ভুলত্রুটি উপেক্ষা করে তার প্রকৃত ভয় ও তাওবাহকে গ্রহণ করেন। এমনকি জীবনের শেষ মুহূর্তেও যদি কেউ আন্তরিকভাবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তার কাছে ক্ষমা চায়, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

  • কর্মের প্রতি সতর্কতা: এই হাদিস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য কাজ করতে হবে এবং নিজের কর্মের জন্য সদা সতর্ক থাকতে হবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর নিকট ফিরে আসার পথ খোঁজা এবং তাঁর রহমত আশা করা উচিত।

এই হাদিসটি হতাশাগ্রস্ত ও পাপী বান্দাদের জন্য আশার আলো দেখায়। এটি শেখায় যে, আল্লাহর রহমত অসীম; তিনি মানুষের অন্তরের স্থিতি ও সত্যিকারের অবস্থা বোঝেন। সত্যিকারের শপথ ও ভয়ের কারণে গ্রহণযোগ্য তাওবার মাধ্যমে তিনি ক্ষমা দান করেন।