আগস্ট ১১, ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্মান রক্ষা করা ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এর শুরু হয় অন্যের ব্যক্তিগত পরিসর বা বাড়িতে প্রবেশের শিষ্টাচার থেকে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানদের জন্য ঘরের বাইরে ও ভেতরে চলাচলের সুস্পষ্ট নিয়ম-কানুন শিখিয়ে গেছেন, যা সমাজে শান্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অবশ্যই অনুমতি নেওয়া। এই নিয়ম কেবল অপরিচিতদের জন্যই নয়, বরং আপনজনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ইসলামে অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি নেওয়া এবং সালাম দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) নিজে সাহাবিদের এই আদব শিখিয়েছেন এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বারবার বলেছেন।
হাদিস থেকে জানা যায়, একবার হজরত কেলাদা ইবনে হাম্বল (রা.) বিনা সালামে ও অনুমতিতে রাসুল (সা.)-এর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি তাকে বাইরে গিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে প্রবেশ করতে পারি?’ বলার জন্য বলেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, অনুমতি চাওয়ার আগে সালাম বলা অপরিহার্য।
আরেকটি হাদিসে হজরত জাবের (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম বলবে না, তাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়ো না।’ (বায়হাকী)। সাহাবিরাও এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করতেন। এমনকি হজরত আবু মুসা (রা.) ও হজরত হুজাইফা (রা.) তাদের মাহরাম নারীদের কাছে যাওয়ার আগেও অনুমতি চাইতেন।
মা-বাবার ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। হজরত আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমি কি আমার মায়ের কাছে যাওয়ার আগেও অনুমতি চাইবো?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি বলেন, ‘তুমি কি তোমার মাকে বিবস্ত্র দেখতে চাও?’ লোকটি বলেন, ‘না।’ তখন নবীজি (সা.) বলেন, ‘তবে তার কাছে যাওয়ার আগেও অনুমতি চেয়ে নিও।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ১৭২৯)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে তাদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।” (সুরা নূর, আয়াত: ২৭)
রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী, কারো ঘরে প্রবেশের আগে দরজার সামনে না দাঁড়িয়ে একপাশে দাঁড়াতে হবে, যাতে দরজা খুললে সরাসরি ভেতরটা দেখা না যায়। এরপর তিনবার অনুমতি চাইতে হবে। যদি কোনো উত্তর না আসে, তাহলে ফিরে যেতে হবে। এই নিয়মগুলো সমাজে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।