সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বৃষ্টির ফোঁটায় আল্লাহর অপার নিদর্শন: করণীয় আমল ও দোয়া

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

বৃষ্টির ফোঁটায় আল্লাহর অপার নিদর্শন: করণীয় আমল ও দোয়া

ছবি- সংগৃহীত

বৃষ্টি মহান আল্লাহর সৃষ্টিকুশলতার এক অনুপম নিদর্শন, এক অপূর্ব বারিধারা যা আকাশ থেকে ঝুমঝুম রবে নেমে আসে। এই বৃষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহ মৃতপ্রায় ভূমিকে সজীব করে তোলেন, প্রকৃতি নবউদ্যমে জেগে ওঠে। আকাশ থেকে অঝোর ধারায় নেমে আসা এই বারিধারার মাঝে জ্ঞানবান ও চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষা এবং সীমাহীন চিন্তার খোরাক। পবিত্র কোরআনে বহু আয়াতে বৃষ্টির উপকারিতা ও এর মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, "তাঁর (আল্লাহ) একটি নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের দেখান বিজলী, ভয় ও আশা সঞ্চারকরূপে এবং আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন, অনন্তর তা দ্বারা শুষ্ক নির্জীব ভূমিকে সজীবতা দান করেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে, সেসব লোকের জন্য, যারা বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।" (সুরা আর রুম-২৪) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, "যদি আপনি তাদের (মক্কার মুশরিকদের) জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা ভূমিকে নির্জীব হয়ে যাওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, মহান আল্লাহ। বলুন, সব প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না।" (সুরা আনকাবুত-৬৩)

বৃষ্টি মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে এবং হৃদয়ে আনন্দের অনুভূতি নিয়ে আসে। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতিতে প্রকাশ পায় স্বস্তির ছাপ। বৃষ্টির সময় একজন মুমিনের কিছু করণীয় আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর এই বিশেষ নিয়ামতকে যেমন উপভোগ করা যায়, তেমনি এই সময়টুকু ইবাদতে শামিল হয়।

বৃষ্টির সময় করণীয় কিছু আমল:

 

১. আল্লাহর কাছে রহমত প্রার্থনা করা

বৃষ্টি সাধারণত রহমতের বার্তা বয়ে আনলেও মাঝে মাঝে এটি দুর্ভোগের কারণও হতে পারে। এ কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি দেখলেই মহান আল্লাহর দরবারে উপকারী বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন বৃষ্টি হতো রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলতেন, 'আল্লাহুম্মা সয়্যিবান নাফিআহ' (অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান এবং উপকারী করে দাও)। (নাসায়ি, হাদিস: ১৫২৩)। কখনো ঝোড়ো হাওয়া বইলে আল্লাহর দিকে গভীরভাবে মনোনিবেশ করে তাঁর ভয়ে কম্পমান থাকা উচিত। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে (রাসুলুল্লাহ সা.) জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা হয় যে আমার উম্মতের ওপর কোনো ‘আজাব’ এসে পতিত হয় নাকি। তিনি বৃষ্টি দেখলে বলতেন, 'রহমাতান' (এটা আল্লাহর রহমত)। (মুসলিম, হাদিস: ১৯৬৯)।

 

২. অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচতে দোয়া

অতিবৃষ্টির কারণে কখনো সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে চলাচলে কষ্ট হয়, বা বন্যায় সবকিছু তলিয়ে যায়। তাই অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে দোয়া করার বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সে দোয়া শিখিয়েছেন। অতিবৃষ্টিতে তিনি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, 'আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা' (অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি বৃষ্টি আমাদের আশপাশে বর্ষণ কর, আমাদের ওপরে নয়)। (নাসায়ি, হাদিস: ১৫২৭)। উল্লেখ্য, এখানে উদ্দেশ্য হলো জনবসতিহীন কোথাও বৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া।

 

৩. বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা

বৃষ্টির সময় শরীরে বৃষ্টির পানির স্পর্শ গ্রহণ করা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রিয় অভ্যাস ছিল। আনাস (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় বৃষ্টি নামল। তখন রাসুল (সা.) তাঁর কাপড় খুলে দিলেন। ফলে এতে বৃষ্টির পানি পৌঁছাল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এরূপ কেন করলেন? তিনি বলেন, "কেননা এটা (এই পবিত্র পানি) মহান আল্লাহর কাছে থেকে আসার সময় খুবই অল্প।" (মুসলিম, হাদিস: ১৯৬৮)।

 

৪. বৃষ্টির সময় দোয়া করা

আকাশ ভেঙে যখন বৃষ্টি নামে তখন মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা উচিত। কেননা বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "বৃষ্টির সময়ের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।" (আবু দাউদ, হাদিস: ২৫৪০)।

 

৫. বৃষ্টি শেষে দোয়া পড়া

বৃষ্টি থেমে গেলে আল্লাহর শোকর আদায় করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেখানো দোয়া পড়া উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের একটি বিশেষ দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। দোয়াটি হলো: 'মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ।' এর অর্থ হলো, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। (বুখারি, হাদিস: ১০৩৮)।