মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২

বিচ্ছেদের পর সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানের প্রয়োজনে যোগাযোগ: সীমা ও শর্ত

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১১:০৯ এএম

বিচ্ছেদের পর সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানের প্রয়োজনে যোগাযোগ: সীমা ও শর্ত

ছবি- সংগৃহীত

দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ বা তালাক একটি কঠিন ও বেদনাদায়ক বাস্তবতা, যা শুধু স্বামী-স্ত্রীকেই নয়, তাদের সন্তানদের জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলে। ইসলামে তালাককে বৈধ হলেও একটি নিকৃষ্ট কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, "আল্লাহ তায়ালার কাছে বৈধ বিষয়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো তালাক।" (সুনানে আবু দাউদ)। তালাকের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সন্তানের দেখাশোনা এবং তাদের প্রতিপালনের জন্য সাবেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা। ইসলামি শরিয়তে এই যোগাযোগের কিছু নির্দিষ্ট সীমা ও শর্ত রয়েছে।

তালাকের পর ইদ্দতকাল শেষে সাবেক স্ত্রী অন্য সব নারীর মতোই 'গায়রে মাহরাম' বা পরনারীর মতো হয়ে যায়। এই বিষয়ে ফতোয়ার কিতাব রদ্দুল মুহতার-এ বলা হয়েছে, "তালাকের পর সাবেক স্ত্রী অন্য সব নারীর মতোই গায়রে মাহরাম হয়ে যায়।" (রদ্দুল মুহতার-খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৫)। এর অর্থ হলো, তাদের মধ্যে পরনারীর মতো পর্দা ও শালীনতা রক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

সন্তানের দেখাশোনার অধিকার মায়ের কাছে থাকার কথা ইসলামে বলা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেন, "অন্যত্র বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্তান হেফাজতের অধিক হকদার হলো তার মা।" (সুনানে আবু দাউদ)। মা যখন সন্তানের কাছে থাকবেন, তখন বাবা সেই সন্তানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। তবে এই সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে:

  • নির্জনতা পরিহার: সাবেক স্বামী ও স্ত্রীকে কোনোভাবেই নির্জনে মিলিত হওয়া যাবে না। ফতোয়ায়ে আলমগীরী কিতাবে বলা হয়েছে, "যদি সন্তান মায়ের কাছে থাকে তবে বাবা তাকে দেখতে বা মাঝে মাঝে নিয়ে যেতে পারে। তবে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর সঙ্গে নির্জনে বসা জায়েজ নয়। কারণ গায়রে মাহরামের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো হারাম।" (ফতোয়ায়ে আলমগিরি-১/৫৪৬)।

  • প্রয়োজনীয় কথা বলা: সন্তান সংক্রান্ত প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত ও রসকসহীন কথা বলতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • পর্দা ও শালীনতা: যোগাযোগের সময় উভয়েরই পর্দা ও শালীনতা রক্ষা করা জরুরি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা যখন নারীদের কাছে কোনো জিনিস চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।" (সুরা আহযাব, আয়াত: ৫৩)।

ইসলামি শরিয়তের এই বিধানগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, বিচ্ছেদের পর সাবেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্তানের প্রয়োজনে যোগাযোগ রাখা গেলেও তা অবশ্যই শরিয়তের নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে হতে হবে। এই বিষয়ে দেশের আলেম-ওলামাগণও একই মত পোষণ করেন এবং বিচ্ছেদের কারণে সন্তানের জীবন যেন বিপন্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন।