সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য প্রেরিত এক সর্বোত্তম আদর্শ, যাঁর জীবন প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুকরণীয়। তিনি শুধু একজন মহান ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, বরং একজন পরম স্নেহময় পিতাও ছিলেন। তাঁর পারিবারিক ও পিতৃত্বের দিকটি প্রতিটি মুসলিম পরিবারের জন্য অনুকরণীয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন: “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ—তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” (সুরা: আহজাব, আয়াত: ২১)
রাসুল (সা.)-এর পিতৃত্বের মূল দিক
রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন আদর্শ পিতা হিসেবে তাঁর সন্তানদের নৈতিক, আত্মিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতেন। তাঁর পিতৃত্বের মূল ভিত্তি ছিল ভালোবাসা, ধৈর্য, সহানুভূতি এবং আখিরাতের কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করা। তিনি তাঁর সন্তানদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা দেখাতেন এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
পুত্র ও কন্যাদের প্রতি তাঁর আচরণ
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাতজন সন্তান ছিলেন—তিন পুত্র (কাসেম, আবদুল্লাহ ও ইবরাহিম) এবং চার কন্যা (জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা)। পুত্ররা শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। পুত্র ও কন্যা সবার প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল দৃষ্টান্তমূলক।
-
পুত্রদের প্রতি ভালোবাসা: যখন তাঁর পুত্র ইবরাহিম (রা.) দুধমাতার কাছে থাকতেন, তখন নবীজি (সা.) শুধু তাকে দেখার জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতেন, তাকে কোলে তুলে নিতেন এবং চুমু খেতেন। ইবরাহিমের ইন্তেকালের সময় নবীজির চোখ থেকে অশ্রু ঝরত, যা আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সমর্পণ থাকা সত্ত্বেও একজন পিতার গভীর ভালোবাসার প্রকাশ ছিল।
-
কন্যাদের প্রতি মমত্ববোধ: নবীজি (সা.) তাঁর কন্যাদের প্রতিও সমান ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতেন।
-
যয়নব (রা.): বদরের যুদ্ধে তাঁর স্বামী বন্দি হলে যয়নব (রা.) মুক্তিপণ হিসেবে একটি হার পাঠান, যা তাঁর মা খাদিজা (রা.) তাঁকে দিয়েছিলেন। হারটি দেখে নবীজির মন এতটাই বিগলিত হয় যে তিনি সাহাবিদের অনুরোধ করেন, যেন হারটি ফিরিয়ে দিয়ে আবুল আসকে মুক্তি দেওয়া হয়।
-
-
-
রুকাইয়া (রা.): বদরের যুদ্ধের সময় রুকাইয়া (রা.) গুরুতর অসুস্থ হলে নবীজি (সা.) তাঁর স্বামী উসমান (রা.)-কে যুদ্ধে না গিয়ে স্ত্রীর সেবা করার নির্দেশ দেন।
-
উম্মে কুলসুম (রা.): তাঁর ইন্তেকালের পর নবী করিম (সা.) তাঁর কবরের পাশে বসে থাকতেন এবং তাঁর চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ঝরত।
-
ফাতিমা (রা.): নবী (সা.)-এর সবচেয়ে ছোট কন্যা ফাতিমাকে তিনি ‘আমার দেহের অংশ’ বলে সম্বোধন করতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি ফাতিমাকে কষ্ট দেয়, সে যেন আমাকেই কষ্ট দেয়। যখন ফাতিমা (রা.) আসতেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতেন এবং চুমু দিতেন।
-
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন আমাদের জন্য একজন আদর্শ পিতার সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে। তাঁর পিতৃত্ব ছিল ভালোবাসা, ধৈর্য, নৈতিক শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনুপম সমন্বয়। তিনি শিখিয়েছেন যে একজন সফল পিতা তিনিই, যিনি শুধু সন্তানের জাগতিক প্রয়োজন মেটান না, বরং তাদের হৃদয়কে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং আখিরাতের কল্যাণের দিকে পরিচালিত করেন।