সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ১১:৩২ এএম
মানবতার ইতিহাসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.) ছিলেন এক অনন্য আলোকবর্তিকা, যিনি শত্রুদের প্রতিও দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ ঘোষণা করেছেন: “وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ” অর্থাৎ ‘আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)
বদরের যুদ্ধে বন্দীদের প্রতি উদারতা
বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় লাভ করার পর বন্দী শত্রুদের প্রতি তাঁর আচরণ ছিল অভাবনীয়। তিনি বন্দীদের হত্যা করার পরিবর্তে মুসলমানদের ঘরে ভাগ করে দেন। সাহাবিরা তাঁদের নিজেদের চেয়েও উত্তম খাদ্য খেতে দেন। এই সদাচরণের ফলস্বরূপ অনেক বন্দী পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
উহুদের যুদ্ধে আঘাতের পর হিদায়াত কামনা
উহুদের যুদ্ধে শত্রুদের আঘাতে মহানবী (সা.)-এর দাঁত ভেঙে যায় এবং মুখমণ্ডল রক্তাক্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে সাহাবিরা যখন অভিশাপ দেওয়ার অনুমতি চাইলেন, তখন তিনি বললেন, “আমি অভিশাপ দিতে আসিনি; বরং রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (সহীহ মুসলিম, ২৫৯৯) শত্রুর হাতে এমন ক্ষতবিক্ষত হয়েও তিনি তাদের জন্য হিদায়াত কামনা করেছেন।
তায়েফের মানুষের প্রতি মহিমা
তায়েফের মানুষ তাঁকে শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি, বরং পাথর ছুঁড়ে রক্তাক্ত করেছিল। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা পুরো শহরকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ! এরা জানে না, হয়তো তাদের বংশধরদের মধ্য থেকে এমন মানুষ আসবে যারা আপনাকে উপাসনা করবে।” (সহীহ বুখারী, ৩২৩১) তাঁর এই মহান দয়ার কারণে পরবর্তীতে তায়েফ ইসলাম গ্রহণ করে।মক্কা বিজয়ের পর ক্ষমা
মহানবী (সা.)-এর দয়ার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে মক্কা বিজয়ের দিনে। যারা বছরের পর বছর ধরে তাঁকে ও তাঁর সাহাবিদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল এবং ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিল, তাদের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, “আজ তোমাদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেই। যাও, তোমরা সবাই মুক্ত।” (ইবনে হিশাম) এটি মানবতার ইতিহাসে ক্ষমার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।
শিক্ষণীয় দিক
মহানবী (সা.)-এর জীবন আমাদের শেখায় যে প্রতিশোধ নয়, বরং দয়া ও ক্ষমাই শত্রুর হৃদয় জয় করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তাঁর এই আচরণ কেবল এক ব্যক্তির চরিত্র নয়, বরং ইসলামের নৈতিক ভিত্তি। শত্রুর প্রতি দয়া প্রদর্শন দুর্বলতা নয়, বরং মহানুভবতার চূড়ান্ত রূপ। তাঁর জীবন আমাদের জন্য এক চিরন্তন প্রেরণা, যা বিদ্বেষকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করার পথ দেখায়।