সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
মানবজীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এক পবিত্র বন্ধন। এই সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পারস্পরিক চাহিদা পূরণ। কিন্তু যখন কোনো কারণে স্ত্রী শারীরিকভাবে স্বামীর চাহিদা পূরণে অক্ষম হন, তখন অনেক পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেন। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে শরিয়তসম্মত কি না, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে।
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ: বৈধতা ও শর্ত
ইসলামে একাধিক বিয়ে বৈধ, যা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার তৃতীয় আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই বৈধতার সঙ্গে একটি কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে—তা হলো 'ন্যায়বিচার'। আল্লাহ বলেন, "আর যদি তোমরা ভয় করো যে, স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একজনই যথেষ্ট।" অর্থাৎ, একাধিক বিয়ে তখনই বৈধ, যখন স্বামী সকল স্ত্রীর প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকতে সক্ষম।
স্ত্রীর অনুমতি কি বাধ্যতামূলক?
ইসলামী আইনবিদদের (ফুকাহা) মধ্যে কোনো মাজহাবই দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতিকে বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেনি। হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি চার মাজহাবই এই বিষয়ে একমত যে, স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েও দ্বিতীয় বিয়ে করলে তা বৈধ এবং সহিহ হবে।
ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) তার বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ **'আল-মুগনি'**তে লিখেছেন, "যদি কোনো ব্যক্তি তার প্রথম স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করে, তাহলে সে বিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ।"
নৈতিকতা ও মানবিক দিক
শরিয়ত দ্বিতীয় বিয়ের জন্য স্ত্রীর অনুমতিকে বাধ্যবাধকতা না দিলেও, পারিবারিক শান্তি এবং সম্পর্কের সৌন্দর্যের জন্য এই অনুমতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে।" এই হাদিসটি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
যদি কোনো স্ত্রী দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অক্ষমতার কারণে স্বামীর যৌন চাহিদা পূরণে অসমর্থ হন, তাহলে শরিয়ত স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। 'ফাতাওয়া হিন্দিয়া'-তেও এই বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে ইসলাম দ্বিতীয় বিয়েকে একটি 'রুখসাহ' বা অনুমোদিত বিকল্প হিসেবে দেখে, যাকে উৎসাহিত করে না। বরং এটি সম্পর্কের ভারসাম্য যখন নষ্ট হয়, তখন একটি সমাধান হিসেবে কাজ করে।
ভারসাম্য এবং আলোচনা
কুরআন সূরা নিসার ১২৯ নম্বর আয়াতে সতর্ক করে বলেছে যে, সব স্ত্রীর প্রতি পূর্ণ ন্যায়বিচার করা সম্ভব নয়। এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য গভীর আত্মবিশ্লেষণ ও ন্যায়পরায়ণতা প্রয়োজন।
একজন মুসলিম পুরুষের উচিত, দ্বিতীয় বিয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে স্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তার সম্মতি চাওয়া। কারণ, শরিয়ত বৈধতা দিলেও নৈতিকতা, পারিবারিক সৌহার্দ্য এবং সম্পর্কের মর্যাদা রক্ষার জন্য আলোচনা ও সম্মতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলাম যেমন নিয়মের ধর্ম, তেমনি এটি মানবিকতারও ধর্ম। দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি থাকলেও, তা যেন পরিপক্বতা, আলোচনা এবং পূর্ণ ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে হয়, এটাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা।
তথ্যসূত্র:
, , ,