জুলাই ২৩, ২০২৫, ১০:৫৮ এএম
মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৮ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ের নেপথ্যে ছিল তরুণ ব্যাটার জাকের আলী অনিকের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইনিংস এবং অধিনায়ক লিটন দাসের সুনির্দিষ্ট বার্তা। মাত্র ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিল বাংলাদেশ, তখন জাকেরের ৪৮ বলে ৫৫ রানের ইনিংসটিই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই ঐতিহাসিক জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল।
পাওয়ারপ্লের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে দল যখন গভীর সংকটে, তখনই উইকেটে আসেন জাকের আলী। এমন পরিস্থিতিতে তার উপর ছিল বিশাল চাপ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাকের নিজেই জানালেন, অধিনায়ক লিটন দাস তাকে একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন। জাকেরের ভাষ্যমতে, "আমি নামার আগে অধিনায়ক বলেছিলেন, চেষ্টা করো যেন ১৪০ রান হয়। কারণ তখন আমরা অনেক আগেই উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ছয় রান কম করেছি। শেষ বলটা ছক্কা হলে লক্ষ্যটা ঠিকই পূরণ হয়ে যেত।" এই বার্তাটি জাকেরকে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে এবং তার ইনিংসকে সঠিক পথে চালিত করে।
জাকেরের ইনিংসে ছিল একটি চার আর পাঁচটি বিশাল ছক্কা। যদিও শেষ বলে তিনি আউট হন, তার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ভর করেই বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৩৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করাতে সক্ষম হয়। জাকের মনে করেন, "আসলে ব্যাটিংটা যদি ঠিকভাবে করতে পারতাম, তাহলে আজকের উইকেটে ১৫৫-১৬০ রান তোলা সম্ভব ছিল।" তবে, দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তে ১৪০ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং তার কাছাকাছি পৌঁছানোই জয়ের মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
পাকিস্তানও এই ম্যাচে দারুণ লড়াই করেছে। ১৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চরম ধুঁকতে থাকা দলটি ফাহিম আশরাফের দ্রুত ফিফটির ওপর ভর করে ম্যাচে ফিরে আসে। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে তারা ৮ রানে হেরে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়।
এই জয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো কোনো মাল্টি-গেম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল। এর আগে ২০১৫ সালে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছিল। এছাড়া আরও দুটি আলাদা ম্যাচে টাইগাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল, তবে সিরিজ জয়ের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাকের আলী আরও বলেন, "এগুলো খুব ভালো দিক। দল হিসেবে যদি স্পষ্টভাবে বলা হয়, এই স্কোরটাই আমরা চাই, তাহলে শুরু থেকেই মাথায় পরিষ্কার থাকে। আজকের পরিস্থিতিতে ১৪০-১৫০ রানই যথেষ্ট ছিল। যদি সিলেটে খেলা হয়, সেখানে হয়তো ১৮০-১৯০ দরকার হবে। মাঠ আর পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হবে। তবে দিনের শেষে লক্ষ্য একটাই — ম্যাচ জেতা।" এই মন্তব্য তার ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এমন মানসিকতা এবং অধিনায়কের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দলের সাফল্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন: