আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম
দেশের উত্তরাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অন্তত ১২টি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, উজানের ঢল ও চলমান ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তা, পদ্মা এবং যমুনার পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি বা এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে এসব নদীর তীরবর্তী এবং নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও চরাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বুধবার সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর বস্তি এলাকাগুলোতে পদ্মার পানি ঢুকে পড়েছে, যেখানে অনেক ঘরেই হাঁটুপানি জমে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা হালিমা বেগম জানান, “এক সপ্তাহ ধরে পানির ভেতরেই আছি। কিছু করার নেই, তাকিয়ে আছি কবে পানি নামবে।” একইভাবে, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনা পারের মানুষ বন্যা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
এই সংকটের কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে উজানের দেশ ভারত থেকে নেমে আসা ঢল এবং দেশের অভ্যন্তরে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে এই বছর নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে দ্রুত। তিস্তা নদীর ক্ষেত্রে, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পানি ছাড়ার ফলে বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ আরও বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা পরবর্তীতে কিছুটা কমলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, পানি ছাড়া অব্যাহত থাকলে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।
বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা ও বহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দৌলতপুর, নাটোর ও লালপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে আমন ধান ও সবজি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভোলার ইলিশা লঞ্চ ও ফেরিঘাটও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পানিবন্দি মানুষদের জন্য জরুরি ত্রাণ ও আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা, বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া এবং নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে নিয়মিত সতর্কবার্তা জারি করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে।