বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দে বিলীন কৃষিজমি, শত শত পরিবার আতঙ্কে

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ১১:৩৪ এএম

পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দে বিলীন কৃষিজমি, শত শত পরিবার আতঙ্কে

ছবি- সংগৃহীত

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকায় আবারও ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে পদ্মার ভাঙনে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে প্রায় ৫০ বিঘা কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক এই ভাঙনে স্কুল, কবরস্থান, ঈদগাহসহ কয়েকশ বাড়িঘর এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শত শত পরিবার। এই পরিস্থিতি স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, কারণ তাদের বহু বছরের দাবি সত্ত্বেও ভাঙন রোধে কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি।


মঙ্গলবার (২২ জুলাই, ২০২৫) সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজার এলাকায় পদ্মার ভাঙনকবলিত স্থানে সরেজমিনে গিয়ে এই ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। নদীর পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে, যেখানে কৃষকদের পাটক্ষেত কাঁচা অবস্থাতেই পদ্মার পেটে চলে যাচ্ছে। স্থানীয়রা নদীর পাড়ে ভিড় জমিয়েছেন, অসহায় চোখে দেখছেন তাদের সর্বস্ব হারানোর দৃশ্য। কৃষকরা জমিতে লাগানো কাঁচা পাট কেটে নিচ্ছেন, যা তাদের ফসল ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জানান, "তিন দিন ধরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের দাবি আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে। এখানে ৪টি প্রাইমারি স্কুল, ৪টি মসজিদ আছে। এই নদী ভাঙন বন্ধ না করা গেলে সব ভেঙে যাবে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ২৫ বছর ধরে এখানে নদী ভাঙছে, কিন্তু কোনো সরকারই স্থায়ী উদ্যোগ নেয়নি। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, যেন সাময়িকভাবে হলেও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লোকমান সরদার জানান, "গত ৩/৪ দিনে আমার ৫ বিঘা জমি পদ্মার বিলীন হয়ে গেছে। একটু একটু জমি রয়েছে সেটাও নদীতে চলে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব।" তিনি দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করেছেন। একই এলাকার কৃষক ফরিদ সরদার, আজিজ সরদার, জিয়াউর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, জিল্লু, আজিজুল, মোনাফ আলী সরদার সহ আরও অনেকে জানান, প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে নদী ভাঙন চলছে, কিন্তু কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যখন যে এমপি হন, তিনি শুধু আশ্বাস দেন, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। তাদের মতে, এই ভাঙনে শত শত বিঘা কৃষি জমি এবং বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় শতাধিক বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ ও বাজার এখন সরাসরি হুমকির মুখে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, তিনি ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। কিছু পাটের জমি বিলীন হয়েছে এবং এর পাশেই আগাম আমন ধান রোপণ করা হয়েছে, যা হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি বলেন, "সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ প্রশাসনসহ সকল কর্মকর্তারা এ বিষয়টি ওয়াকিবহাল রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করতে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া প্রয়োজন সেই ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারটিও আমরা ভাবব।"

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, তিনি দেবগ্রামের মুন্সিবাজার এলাকার কাউলজানি এলাকায় ভাঙনের খবর শুনেছেন। কয়েকদিন আগে ভাঙনকবলিত স্থানটি তিনি পরিদর্শন করে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পত্র দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, "রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্ষাকালে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। এর মধ্যে চলতি বর্ষাকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজার এলাকায় কিছু কৃষি জমি ভাঙন কবলিত রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। গোয়ালন্দের ইউএনও এ বিষয়ে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পত্র প্রেরণ করেছেন। আমারাও ওই পত্রের রেফারেন্স ধরে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রকল্পের জন্য পত্র দিয়েছি। প্রকল্পের অনুমোদন পেলেই আমরা এসব জায়গায় কাজ শুরু করব।" তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে যে দীর্ঘ সময় লাগে, তার আগেই তাদের সব কিছু পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।