একটি দলের সাধারণ সম্পাদক পেয়েও নোয়াখালীবাসীর কোনো উন্নয়ন হয়নি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, একটি দলের সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালীর বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলের মানুষের কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। গতকাল (মঙ্গলবার, ২২ জুলাই) নোয়াখালী জেলা শহরের মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া মাহফিল শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য নোয়াখালীর উন্নয়ন এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, "গত সরকারে আমরা আশা করেছিলাম নোয়াখালীবাসীর কিছু উন্নয়ন হবে। কিন্তু যে রোড দিয়ে এসেছি, সেখানে উন্নয়নের কোনো চিহ্ন দেখিনি।" তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, "নোয়াখালীতে আমরা যে বাস্তবতা দেখেছি, সেখানে একটি দলের সাধারণ সম্পাদক থাকার পরও নোয়াখালীবাসীর কোনো উন্নয়ন হয়নি। ভবিষ্যতে যদি এনসিপি সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে উন্নয়নের ইটের গাঁথুনি নোয়াখালী থেকেই শুরু করব।" তার এই বক্তব্য সরাসরি নোয়াখালীর বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে সচিবালয়ে গিয়েছিল, তাদের কিছু দাবি যৌক্তিক ছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাশের প্রকৃত সংখ্যা জানানো হয়নি। সরকার ছিল নীরব।" তিনি আরও বলেন, "যখন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তখন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে আমরা দেখিনি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাউকেও তখন দেখিনি। জাতি ছিল অন্ধকারে। আজ তারা কথা বলেছে—এটাও আশার দিক।"

 

শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, "শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যাবে না। তারা পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছিল—আমরা তাদের সাথে একমত হয়েছি। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো তদন্ত সাপেক্ষে মানতে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।" তিনি উল্লেখ করেন যে, সারাদেশে এনসিপি একযোগে সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনায় অংশ নিয়েছে, যা তাদের মানবিক সংহতির নিদর্শন।

পূর্বের দুর্ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা না নেওয়ার বিষয়েও নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আমরা রানা প্লাজার মতো বহু ঘটনা দেখেছি, কিন্তু কোনো শিক্ষা নেইনি। তাই দেশের আমূল সংস্কার প্রয়োজন।" তার মতে, দেশের সেনাবাহিনীর সরঞ্জামসহ ইকুইপমেন্টগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানানসই করতে হবে। স্কুলগুলোর আশেপাশে যে ফ্লাইং জোন রয়েছে, সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে, "উত্তরা এখন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।" তিনি রাজউকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং কোনো দখলদার বা গডফাদারের কাছে মাথানত না করার আহ্বান জানান।

 

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী আরও বলেন, "সঠিকভাবে আরবান প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারলে, বিশেষ করে কক্সবাজারসহ বিমানবন্দরঘেঁষা এলাকাগুলো পরিকল্পিত হলে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। দেশ পুনর্গঠনে আমরা ধ্বংসাত্মক নয়, গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে চাই। আপনারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকুন এবং তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন।"

এর আগে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় নোয়াখালী মডেল মসজিদে এনসিপির উদ্যোগে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মডেল মসজিদের ইমাম মাওলানা আকরাম হোসেন। এই মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রধান সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন এবং নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এনসিপির নেতৃবৃন্দ।