জুলাই ২৯, ২০২৫, ১১:৫০ এএম
সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তবে, যখন এই সহায়তার অর্থ নিয়ে জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনা ঘটে, তখন তা শুধু সুবিধাভোগীদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেই না, বরং সরকারের ভালো উদ্যোগগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। পঞ্চগড়ে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের ঘটনা এমনই একটি গুরুতর অভিযোগ, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকার দরিদ্র গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। প্রথম দফায় চার হাজার ৮০০ টাকা পেলেও, বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো টাকা তার মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ঢুকছে না। অবশেষে তিনি জানতে পারেন, তার নামে বরাদ্দের টাকা তুলছেন অন্য কেউ।
ফাতেমার মতো পঞ্চগড় জেলার অন্তত ৬০০ অসহায় দরিদ্র মা এই মা-শিশু সহায়তা কর্মসূচির ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। তাদের টাকা অত্যন্ত সুকৌশলে একটি প্রতারক চক্র তুলে নিয়েছে, যা অন্তত অর্ধ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতারকরা প্রত্যেকের মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকিং নম্বরের স্থানে অন্য নম্বর ব্যবহার করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
জানা গেছে, পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ৫৭৬ জন, বোদা উপজেলায় ২১ জন ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় তিনজন মা-শিশু সহায়তা কর্মসূচির ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। এই প্রতারক চক্র এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, এবং তাদের খুঁজে বের করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই বিষয়টিকে কেউ বলছেন হ্যাকিং, আবার কেউ বলছেন ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারো যোগসাজশ রয়েছে। যারা সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করছেন, সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন তারাও। চাঞ্চল্যকর এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও খুবই বিব্রত। এছাড়াও, অন্য ভাতাভোগী মায়েরাও রয়েছেন আতঙ্কে। তারা এ বিষয়ে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।
গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার বলেন, “এবার ঈদে আমার সন্তানকে একটা ভালো জামা কিনে দিতে পারিনি। ভালো কোনো খাবার খাওয়াতেও পারি না। আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের সঙ্গে যারা প্রতারণা করছে তাদের শনাক্ত করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। পাশাপাশি আমরা যেন আমাদের হক ফিরে পাই সেই ব্যবস্থা যেন করা হয়।”
পঞ্চগড় হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, “শুধু আমাদের ইউনিয়নেই এমন শতাধিক ভুক্তভোগী মা রয়েছেন। অনেকেই সন্দেহ করছেন আমরা বুঝি তাদের নামে টাকা তুলে নিচ্ছি। আমরা জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রত। আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত। কারণ এ তালিকা তারা ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার কথা নয়।”
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “পঞ্চগড় সদরের প্রতি ইউনিয়নে ৯ জন আর বাকি ৪ উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে ৫ জন করে মাকে প্রতি মাসে তালিকাভুক্ত করা হয় মা-শিশু সহায়তা কর্মসূচি ভাতার জন্য। ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে তালিকা আসার পর আমরা শুধু সাবমিট করি। যে ৬০০ নারী ভাতা পাচ্ছেন না তাদের মোবাইল ও ব্যাংকিং নম্বর সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই আমরা সংশোধিত তালিকা প্রেরণ করব।”
আপনার মতামত লিখুন: