জুলাই ২২, ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
এককালের প্রমত্ত তিতাস নদী, যা অদ্বৈত মল্লবর্মণের বিখ্যাত উপন্যাস 'তিতাস একটি নদীর নাম' এবং ঋত্বিক ঘটকের কালজয়ী চলচ্চিত্রের পটভূমি, বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। মেঘনা নদীর এই প্রধান উপশাখাটি, যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার তিতাস উপজেলাসহ বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত, এখন কচুরিপানার ভয়াবহ দখলে। বিশেষ করে, তিতাস উপজেলার গোপালপুর-নাগেরচর সংযোগ ব্রিজ থেকে হোমনা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার নদীজুড়ে কচুরিপানার স্তর জমে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, একসময় যে তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ হতো এবং পাড়ের বাসিন্দারা যার স্বচ্ছ পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতেন, সেই নদী এখন কচুরিপানার স্তূপে পরিণত হয়েছে। নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং চিরচেনা এই নদী তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও, এর সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে তিতাস নদী পুনঃখননের কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালে শেষ হয়। কিন্তু এই খনন কাজের সময় আওয়ামী লীগ নেতারা বালু বিক্রির মহোৎসবে মেতে উঠেছিলেন। নদী খনন সিন্ডিকেট শত কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ নদীর প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার চিত্রকেই আরও স্পষ্ট করে তোলে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ অলিউজ্জামান এই বিষয়ে বলেন, হোমনা-তিতাস অধিনস্ত তিতাস নদী পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় লালপুর হতে হোমনা পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার নদী খনন সম্পন্ন হয়েছে, যার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। তবে, কচুরিপানা পরিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দায় এড়িয়ে বলেন, "এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ না। কচুরিপানা পরিষ্কার করতে হলে স্থানীয়দের উদ্যোগ নিতে হবে। অথবা ইউনিয়ন পরিষদের যদি ফান্ড থাকে তাহলে ওই ফান্ড থেকে টাকা ব্যয় করে পরিষ্কার করা যেতে পারে।"
নির্বাহী প্রকৌশলীর এই মন্তব্য স্থানীয়দের মধ্যে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, কারণ স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নদীর এমন বেহাল দশা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন: