মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

একের পর এক গণপিটুনি, ১০ দিনে নিহত ৯

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১২, ২০২৫, ১০:৫৫ এএম

একের পর এক গণপিটুনি, ১০ দিনে নিহত ৯

ছবি- সংগৃহীত

দেশে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। এর সঙ্গে আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭। এই সময়ে আহত হয়েছেন ২৬৬ জন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ১১১ জন মানুষ ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।

সর্বশেষ ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন রূপলাল দাসপ্রদীপ দাস; সম্পর্কে তাঁরা জামাই-শ্বশুর। স্বজনেরা বলছেন, প্রদীপকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন রূপলাল। তাঁরা দুজন বাড়ি ফিরছিলেন যখন ভ্যানচোর সন্দেহে তাঁদের হত্যা করা হয়।

নিহত রূপলাল দাসের মা, বৃদ্ধা লালিচা দাস বলেন, তাঁর ছেলে চোর নন, জুতা সেলাই করে সংসার চালান। মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করার জন্য তিনি ভাগনি জামাইকে বাড়িতে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন।

একই দিন মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনির পর একজনের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রমের দুর্বলতার সুযোগে দেশে চুরি, ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) একের পর এক ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পাশাপাশি আগে থেকেই এ ধরনের অপরাধে বিচার না হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, যখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি বেড়ে যায়, তখন মানুষও মানুষের প্রতি সহিংস হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিক মব ও সংঘবদ্ধ মবের ঘটনা ঘটছে। সংঘবদ্ধ মবের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে।

আগস্টের প্রথম ১০ দিনের ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮টিতেই চোর সন্দেহে মারধর করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি ঘটনার কোনোটি চাঁদাবাজি, কোনোটি পূর্বশত্রুতার কারণে, কোনোটি বিরোধ থেকে ঘটানো হয়েছে।

 

সরকারও মব নিয়ে স্বস্তিতে নেই। ১ আগস্ট প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বলেন, ‘মব সন্ত্রাস দমন করার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, পুলিশের মোরাল (নৈতিক অবস্থান) ছিল না। যে পুলিশ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ ছিল, সেই পুলিশ যখন দেখে গণ-অভ্যুত্থানের দাবিদার বলে কিছু মহল মব করছে, তখন সেটা দমন করতে পারেনি।’

তবে মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, গণপিটুনি ও মব দমনে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলেই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও একের পর এক ঘটনা ঘটছে।

গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দুর্বল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও তারা একধরনের বিভ্রান্তিতে ভুগছে বলে মনে হয়। মানুষ এসব ঘটনায় সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। মব তৈরির পেছনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নও কাজ করছে বলে মনে করেন নূর খান লিটন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত সবখানে মব–ভীতি কাজ করছে। পুলিশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দৃশ্যমান শক্ত পদক্ষেপ দরকার।

দেশে মব সন্ত্রাস নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’ শিরোনামের এক জরিপে উঠে এসেছে, মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ৮০ শতাংশ। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের কারণে রাস্তায় হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭ শতাংশ মানুষ। জরিপটি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।