আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১০:১৯ এএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিত্যপণ্যের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও, সম্প্রতি খাদ্যদ্রব্যের দাম আবারও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মধ্যস্বত্বভোগীরা একটি বিশেষ 'মেকানিজম' তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে বাজার প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ ভীষণভাবে বিপাকে পড়ছে। সাধারণভাবে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজিকে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দায়ী করা হলেও, প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে আসল কলকাঠি নাড়ছে এই মধ্যস্বত্বভোগীরাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল হবে না।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দেশের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনকারী জেলা ও বন্দর থেকে ঢাকার বাজার পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েছেন। তারা দেখেছেন, সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি এখন অনেক কম, তবে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে এটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ নয়। মূল সমস্যা হলো আড়তদার ও কর্পোরেট গ্রুপগুলোর দাদন ও কমিশন বাণিজ্য। এ ধরনের অনিয়মের কারণে খুচরা বাজারে দাম দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, "মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্যই সবকিছুর দাম বেড়েছে। এখন ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে এক গ্রুপকে চাঁদা দিতাম, এখন তিনটি গ্রুপকে দিতে হয়। বিএনপি, এনসিপি আর জামায়াত—এই তিন গ্রুপ। তবে মূল সমস্যা হলো মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট।"
গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে এই সমস্যার সমাধানে তিনটি সুপারিশ করেছে: ১. সড়কে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ২. কারওয়ান বাজারসহ সব পাইকারি ও খুচরা বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের অনিয়ম ঠেকাতে মনিটরিং বাড়ানো। ৩. যেসব জেলায় সবজি উৎপাদন বেশি, সেখানে আড়ত স্থাপন করা এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় হাতবদল কমিয়ে দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আনা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষ বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ। তাই সরকার রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে অবিলম্বে মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।