সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। দুটি রোগই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এদের প্রাথমিক উপসর্গগুলো প্রায় একই রকম হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রায়শই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথার মতো লক্ষণগুলো দুই রোগেই দেখা দেয়। ফলে অনেকে ডেঙ্গু ভেবে পরীক্ষা করালেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। পরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়।
তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়, যা নেগেটিভ আসে। কয়েক দিন পর উপসর্গ দেখে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করালে ফল পজিটিভ হয়। তিনি বলেন, “হাত-পা ফুলে গিয়েছিল, এমন ভয়াবহ ব্যথা হয়েছিল যে সারাদিন কাঁদতাম। এখনো পায়ের গিরায় গিরায় ব্যথা, পা টেনে অফিস যেতে হয়।” শুধু তিনি নন, তার পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মধ্যে কিছু সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। ডেঙ্গু হলে হঠাৎ উচ্চ জ্বর আসে এবং ৪-৫ দিন পর শরীরে লালচে র্যাশ দেখা যায়। এই রোগে রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে, যা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও মৃত্যুঝুঁকিও বাড়াতে পারে। ডেঙ্গুতে শরীরে ব্যথা থাকলেও তা চিকুনগুনিয়ার মতো তীব্র নয়। এছাড়া বমি করা ও খেতে না পারার মতো সমস্যা দেখা যায়।
অন্যদিকে, চিকুনগুনিয়ার জ্বর প্রথমে থেমে থেমে আসে এবং ১০২-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। এই রোগের প্রধান ও সবচেয়ে কষ্টদায়ক উপসর্গ হলো শরীরের প্রায় সব জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, যা হাঁটাচলা কঠিন করে তোলে। হাত-পা ফুলে যাওয়া, তীব্র মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথাও দেখা যায়
চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত প্লাটিলেট কমে না এবং রক্তক্ষরণ হয় না, তাই এতে মৃত্যুঝুঁকি নেই। তবে এর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অনেক সময় আক্রান্তদের চামড়া উঠে যায় বা কালো হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, ডেঙ্গুতে যেখানে মৃত্যুঝুঁকি থাকে, চিকুনগুনিয়ায় সেই ভয় নেই। তবে জয়েন্টের ব্যথা এতটাই ভয়াবহ হয় যে রোগীরা হাঁটাচলাও করতে পারেন না। এজন্য একে অনেকে 'ল্যাংড়া জ্বর'ও বলেন।
ডেঙ্গু জ্বরের ২-৩ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে শনাক্ত হয়। অন্যদিকে, চিকুনগুনিয়া জ্বরের ৫-৭ দিন পর পরীক্ষা করলে কার্যকর ফল পাওয়া যায়। এর আগে পরীক্ষা করলে রোগ শনাক্ত নাও হতে পারে। চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করতে সাধারণত আইসিটি, আরটি-পিসিআর বা সেরোলজি টেস্ট করা হয়। ডেঙ্গু সাধারণ রক্ত পরীক্ষাতেই ধরা পড়ে।