বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

রাশিয়ার ইয়াকুটিয়ায় শ্রমিকবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১৩,

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ১১:২৩ এএম

রাশিয়ার ইয়াকুটিয়ায় শ্রমিকবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১৩,

ছবি- সংগৃহীত

রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ইয়াকুটিয়া অঞ্চলে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩ জন খনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। খনি শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ২৫ মিটার গভীর খাদে পড়ে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। স্থানীয় সময় সোমবার (২১ জুলাই) ভোর ৩টা ২০ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ডেনিসভস্কি মাইনিং অ্যান্ড প্রসেসিং প্ল্যান্টের শিল্প সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই প্ল্যান্টে মূলত কয়লা খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করা হয়। স্থানীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বাসটি কাদাযুক্ত জলাশয়ের পাশে উল্টে পড়ে আছে, যা দুর্ঘটনার ভয়াবহতা প্রমাণ করে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি এত ভোরে ঘটার কারণে উদ্ধার কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল, যা হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে থাকতে পারে।

এই দুর্ঘটনার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্ভাব্য অবহেলার জন্য একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই দুর্ঘটনার পেছনে কোনো মানবসৃষ্ট ত্রুটি বা গাফিলতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত চালকের ত্রুটি, গাড়ির যান্ত্রিক সমস্যা অথবা রাস্তার বেহাল দশা - এই তিনটি প্রধান কারণের যেকোনো একটি বা একাধিকই দায়ী থাকে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ উন্মোচন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে মঙ্গলবার অঞ্চলটিতে শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে।

রাশিয়ায় এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামো তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেখানে প্রায়শই এমন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এর আগে ২০১৯ সালে সাইবেরিয়ায় একই ধরনের এক বাস দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটির বিশাল ভৌগোলিক আয়তন এবং শীতকালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তবে, এই ঘটনায় যেহেতু খনি শ্রমিকরা জড়িত, তাই খনি নিরাপত্তা এবং কর্মীদের পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রোটোকলগুলো কতটা মেনে চলা হয়েছিল, সেই প্রশ্নও সামনে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞের মতে, "রাশিয়াতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য অনেক সময় পুরোনো বাসের ব্যবহার দেখা যায়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, রাতের বেলা বা ভোরে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে চালকদের ক্লান্তিও বড় একটি কারণ হতে পারে। এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে কেবল কারণ নির্ণয় নয়, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।"

এই মর্মান্তিক ঘটনা রাশিয়ার খনি অঞ্চলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আশা করা যায়, তদন্তের ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা এড়ানো যায়।