জুলাই ২০, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
আইন-আদালত অঙ্গনে আলোচিত এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহকারে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস ঘিরে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। আজ রোববার (২০ জুলাই, ২০২৫) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২২ মে হাইকোর্ট ইশরাক হোসেনকে ঢাকার মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা একটি রিট আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এই আদেশের পর এনসিপি নেতা সারজিস আলম তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, "মব তৈরি করে যদি হাইকোর্টের রায় নেওয়া যায়, তাহলে এই হাইকোর্টের দরকার কী?" এই মন্তব্যটিকে উচ্চ আদালত সম্পর্কে 'মর্যাদাহানিকর' ও 'অবমাননাকর' উল্লেখ করে গত ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন তাকে একটি নোটিশ পাঠান।
নোটিশে সারজিস আলমকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে, নোটিশ পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তবে, নোটিশ পাওয়ার পর সারজিস আলম ক্ষমা না চাওয়ায় গত ২৮ মে আইনজীবী জসিম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জসিম উদ্দিন নিজেই শুনানি করেন।
আবেদনের ওপর ৭ জুলাই শুনানি শেষে হাইকোর্ট আদেশের জন্য আজকের দিন (রোববার) ধার্য করেন। আজকের আদেশে আদালত বলেছেন, 'ডিসপোসড অফ' অর্থাৎ আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আবেদনকারী আইনজীবী জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন যে, পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি পেলে পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি আরও জানান যে, পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর তিনি আপিল বিভাগে যাবেন।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী জসিম উদ্দিনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির উপস্থিত ছিলেন। এই আদেশের মাধ্যমে আপাতত এই পর্যায়ের আইন-আদালত সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ হলো, তবে আপিল বিভাগে বিষয়টি আরও এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সারজিস আলমের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার এই মামলা এবং হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি বাংলাদেশের আইন-আদালত ব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের মর্যাদার মধ্যে বিদ্যমান ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই মামলার পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ সামনে এলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় এটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন: