মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে, পড়ুন বিস্তারিত মূল ২৮ দফার

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে, পড়ুন বিস্তারিত মূল ২৮ দফার

ছবি- সংগৃহীত

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ 'জুলাই ঘোষণাপত্র' পাঠ করেছেন। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জনগণের সেই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা কীভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে? কী কী বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলে? চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

আজ ৫ই আগস্ট, ২০২৫, রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে '৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এই চার দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের অংশ হিসেবে এই ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

এটি ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি দলিল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে ঘোষণাপত্রটি সংবাদমাধ্যমকে সরবরাহ করা হয়েছে।

ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়বস্তু হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের নিরন্তর সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা। ঘোষণাপত্রে মোট ২৮টি দফা রয়েছে, যার মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে স্পষ্ট করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

  • ১-২: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা: উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

  • ৩-৬: সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিচ্যুতি: বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা এবং অপপ্রয়োগের ফলে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতার দিকটি উল্লেখ করা হয়েছে। বাকশাল কায়েম, সামরিক স্বৈরশাসন এবং পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।

  • ৭-১০: ফ্যাসিবাদী শাসনের সমালোচনা: গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসনের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। এ সময়ে সংবিধানের অবৈধ পরিবর্তন, গুম, খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিপর্যয় ঘটানোর বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

  • ১১-১৫: আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এবং বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে দমন করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, তিনটি প্রহসনের নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) এবং সরকারি চাকরিতে কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভের কথা বলা হয়েছে।

  • ১৬-১৯: গণ-অভ্যুত্থানের বর্ণনা: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন কীভাবে বর্বর দমন-পীড়ন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ফলে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, এই গণ-অভ্যুত্থানে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করে এবং ফ্যাসিবাদী বাহিনীর হাতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়। এর চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনী জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেয়। ৫ আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

  • ২০-২৩: অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা: অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। জনগণের সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় প্রকাশ করা হয়েছে।

  • ২৪-২৮: ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদকে 'জাতীয় বীর' হিসেবে ঘোষণা করে তাদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারীদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের প্রতি আইনের শাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণাপত্রে পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। সবশেষে, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্রটি সন্নিবেশিত থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে।

'জুলাই ঘোষণাপত্র' ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, বরং এটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপরেখা দিচ্ছে। এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমেই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে বলে আশা করা যায়। দিনাজপুর টিভি এই গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং এর ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরও জানতে চোখ রাখুন দিনাজপুর টিভিতে।