মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বেতন সমন্বয় করতে নতুন পে কমিশন গঠন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৫, ১১:০৯ এএম

বেতন সমন্বয় করতে নতুন পে কমিশন গঠন

ছবি- সংগৃহীত

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নে পে কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য গঠিত এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক অর্থ সচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানকে। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "উপদেষ্টা পরিষদ ন্যাশনাল পে কমিশনে অনুমোদন দিয়েছে। সরকারি, আধাসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পে স্কেল ২০১৫ সালে হয়েছিল। ১০ বছর পর নতুন পে স্কেল হচ্ছে।"

প্রেস সচিব আরও বলেন, গত সরকারের সময় মূল্যস্ফীতি দুই সংখ্যার ঘর অতিক্রম করেছিল। গত মাসে তা ৮ শতাংশে এলেও, মূল্যস্ফীতির কারণে বেতনের যে সমন্বয়, সেটা ঠিকমতো হয়নি। এই পে কমিশন সেই অসময়তা দূর করতে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন পে কমিশনের প্রধান জাকির আহমেদ খান গতকাল বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন নিষ্পত্তি কমিটির সভায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের (একাংশ) সভাপতি মো. বাদিউল কবীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কমিশনের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। জাকির আহমেদ খান কর্মচারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, সবার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি কাজ করবেন।

দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা পান। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) দেওয়ার দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

গত ১৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস-উর রহমান বলেছিলেন, সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে অবসরে গিয়ে পেনশন ভোগরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই সুবিধা পাবেন। পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সবাই এই মহার্ঘ ভাতা পাবেন বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। তবে এরপর গত ২৮ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতা পাবেন কি পাবেন না, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

অনেকেই আশা করছিলেন, জুন মাসে ঘোষিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতার বদলে বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।

পে স্কেল অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০টি বেতন গ্রেড রয়েছে। এই কাঠামোতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হয় মাসে ২২ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ ধাপে একজন সচিব মাসে ৭৮ হাজার টাকা, জ্যেষ্ঠ সচিব ৮২ হাজার টাকা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ৮৬ হাজার টাকা মূল বেতন হিসেবে পান। মূল বেতনের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত বাবদ আলাদা ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান সরকারি কর্মচারীরা। এ ছাড়া বছরে দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি বাংলা নববর্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়তি ভাতা পান তারা।