শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে ঢাকার নিরাপত্তা দুর্ভেদ্য, নেপথ্যে পুলিশ ও দলের সমন্বয়

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২৫, ১১:৫৮ এএম

জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে ঢাকার নিরাপত্তা দুর্ভেদ্য, নেপথ্যে পুলিশ ও দলের সমন্বয়

সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সংলগ্ন এলাকা এক দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি বহুমাত্রিক ও সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এই ব্যবস্থার কেন্দ্রে রয়েছে একদিকে যেমন পুলিশের কঠোর ও দৃশ্যমান উপস্থিতি, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে সমাবেশ আয়োজকদের সাথে নিবিড় সমন্বয়, যা সাম্প্রতিককালের জাতীয় রাজনীতিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার (১৯ জুলাই, ২০২৫) ভোর থেকেই শাহবাগ, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর, এবং টিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের হাজারো সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জনস্রোতের ওপর নজর রাখছেন। সমাবেশস্থলের প্রবেশপথগুলোতে স্থাপিত আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে আগতদের তল্লাশি করা হচ্ছে। ডিএমপির সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, বিদ্যমান সিসিটিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং যেকোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষায়িত সোয়াট (SWAT) ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আজকের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো পুলিশ এবং জামায়াতের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয়। সমাবেশ শুরুর কয়েকদিন আগেই ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে জামায়াত নেতৃবৃন্দের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি বিষয় নির্ধারিত হয়। এরই ফলস্বরূপ, ডিএমপির নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি জামায়াতের নিজস্ব প্রায় ২০ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। তারা শুধু জনস্রোত নিয়ন্ত্রণই করছেন না, বরং পুলিশের সাথে সমন্বয় করে যানজট নিরসন এবং নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ে সহায়তা করছেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের কর্মীদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো প্রকার উস্কানিমূলক স্লোগান না দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য, যা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

এই বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য, কোনো সহিংসতা ছাড়াই যেন তারা তাদের কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারে এবং নগরবাসীর নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়।” অন্যদিকে, ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (রমনা) কাজী রুমানা নাসরিন বলেন, “বড় বাসগুলোকে শহরের মূল কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দিয়ে দূরে থামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। এত বড় জনসমাগমে কিছুটা প্রভাব পড়া স্বাভাবিক, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।”

দিনশেষে, এই সমাবেশটি শুধু জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চই নয়, এটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্যও একটি বড় পরীক্ষা। একটি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর সমাবেশকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা এবং আয়োজকদের সাথে ফলপ্রসূ সমন্বয়ের এই মডেলটি কতটা সফল হয়, তার ওপর বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।