সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: শেষ ৫ দিনের ঘটনাবলী এবং সরকারের পতন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৩, ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: শেষ ৫ দিনের ঘটনাবলী এবং সরকারের পতন

জুলাই আন্দোলনের শেষ পাঁচ দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এবং এর ফলে সরকারের পতনের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন এখানে তুলে ধরা হলো।

১ আগস্ট: সরকার জামায়াত-ই-ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং এটিকে নিষিদ্ধ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

২ আগস্ট: ঢাকায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং মিছিল চলতে থাকে। খুলনা ও সিলেটে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রামে জুমার নামাজের পর একটি মসজিদ থেকে মুসল্লিদের একটি বড় মিছিল বের হয়।

৩ আগস্ট: ছাত্ররা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি বড় সমাবেশ করে, যেখানে তারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানায়। তারা একজন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানায়। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

৪ আগস্ট: ঢাকা এবং অন্যান্য জেলায় ব্যাপক সহিংসতা ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়। ছাত্ররা কারফিউ অমান্য করে এবং ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়।

৫ আগস্ট: কারফিউ অমান্য করে হাজার হাজার মানুষ ঢাকার প্রবেশ পথে জড়ো হওয়ায় পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। পরে জানা যায় যে, শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যাদের মধ্যে জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতারাও ছিলেন, যাদের মাত্র কয়েক দিন আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

পরিসংখ্যান ও তথ্য: ৪ আগস্টে সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ৭৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে একটি থানায় হামলায় দুজন র‍্যাব সদস্য, চারজন আনসার পুলিশ সদস্য এবং আরও দুজন নিহত হন। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালীন ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং ২৩০০ জনেরও বেশি আহত হন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (OHCHR)-এর প্রতিবেদন: ওএইচসিএইচআর ভুক্তভোগীদের বিবরণ বিশ্লেষণ করে একটি "ভয়ংকর বাস্তবতা" তুলে ধরেছে। ভুক্তভোগীদের নির্ভরযোগ্য বিবরণে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দ্বারা শারীরিক ও যৌন সহিংসতার ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আগস্টের শুরুতে ঢাকার একটি ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে একজন মহিলাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, তার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং তাকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওএইচসিএইচআর জানায় যে, জুলাইয়ের প্রথম থেকেই সাবেক সরকার আন্দোলনটিকে একটি রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখেছিল। প্রতিবেদনে আরও কয়েকটি হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২ আগস্ট উত্তরার যুবলীগের দ্বারা ছাত্রদের ওপর হামলা, ৪ আগস্ট কুমিল্লায় ছাত্রলীগ কর্তৃক অস্ত্র নিয়ে হামলা এবং সাভার ও মিরপুরে সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে পুলিশের সঙ্গে সমন্বিত হামলা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেদনে ৫ আগস্ট খুলনার একটি ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়।