আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট, এক অভাবনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। একদিকে সরকার ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের কারফিউ, অন্যদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি। এই দুইয়ের জেরে সেদিন সকাল থেকেই থমথমে আর অস্বাভাবিক নীরবতা বিরাজ করছিল পুরো শহর জুড়ে। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে ছিল কাঁটাতারের বেড়া আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাদের ঘোষণা ছিল, ৫ আগস্ট দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান এবং ৬ আগস্ট 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি। তবে ৪ আগস্ট হঠাৎ করেই 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি ৫ আগস্টে এগিয়ে আনা হয়। এর পরপরই ৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে তৎকালীন সরকার। এর ফলে, ৫ আগস্টের সকাল থেকেই ঢাকার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
৫ আগস্ট ভোর থেকেই ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেমন - মহাখালী, বনানী, গুলশান, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ বিভিন্ন প্রবেশমুখে কাঁটাতারের বেড়া বসিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। গণভবন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশেও ছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। কারফিউ পাস থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় বের হওয়া মানুষকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
এই কঠোর নিরাপত্তার কারণে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। শুধু অ্যাম্বুলেন্স এবং কিছু সংবাদমাধ্যমের গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। বিবিসির এক সংবাদকর্মী তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেছেন, সেদিন রামপুরা ব্রিজের কাছে এবং বনশ্রীতে কয়েক দফা সেনা চেকপোস্ট পেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)-এর প্রতিবেদনেও ওই দিনের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'মার্চ অন ঢাকা' কর্মসূচি ঠেকাতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ প্রাণঘাতী গুলি চালিয়েছিল।
সকাল গড়িয়ে ১০টা বাজতেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। কারফিউ ভেঙে দলে দলে রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেন তরুণ-তরুণী, যাদের বেশিরভাগই ছিল শিক্ষার্থী। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকার উত্তরা। সকাল ১১টার দিকে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়। কাঁটাতারের ব্যারিকেড ঠেলে শিক্ষার্থীরা সামনে যেতে শুরু করে। ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও, মানুষজনের সমাবেশ বন্ধ করা যায়নি। ওইদিনের পরিস্থিতিই মূলত পরবর্তী সময়ে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করে।