মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার পতন: বিজয়োল্লাসের আড়ালে কঠিন পথচলা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ০১:৫২ পিএম

শেখ হাসিনার পতন: বিজয়োল্লাসের আড়ালে কঠিন পথচলা

ছবি- সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে পতন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এই দিনটিকে অনেকে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' হিসেবে অভিহিত করে বিজয়োল্লাস করেছে। কিন্তু এই বিজয়োল্লাসের এক বছর পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো নতুন করে সামনে এসেছে। বিশেষ করে, মব সহিংসতা, ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রভাব বৃদ্ধি এবং নারী অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, শেখ হাসিনার পতনের এক বছর পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের কঠিন পথচলা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির এক বছর পূর্তিতে গত ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা একত্রিত হয়ে 'নতুন বাংলাদেশ' গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই দিনটিকে অনেকে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে এই বিজয়োল্লাস দেশের গত ১২ মাসের পুরো গল্প নয়।

বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে মব সহিংসতা, গণপিটুনি এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের পুনরুত্থান ঘটেছে, যা দেশের গণতন্ত্রের পথে একটি বড় হুমকি। নারী অধিকারকর্মী শিরিন হক বিবিসিকে বলেন, “আমরা একটি শাসন পরিবর্তন দেখেছি, কিন্তু এটি কোনো বিপ্লব নয়। কারণ নারীবিদ্বেষ এবং পুরুষের আধিপত্য এখনো অটুট।” তিনি আরও বলেন, নারী অধিকার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আপত্তির সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়াটা হতাশাজনক।

এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনীত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে দেশে ফিরে আসতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বিদ্যমান থাকলেও মব সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখার জামান বলেন, “আমরা একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করেছি, কিন্তু যতক্ষণ না আমরা স্বৈরাচারী আচরণ বন্ধ করি, ততক্ষণ আমরা সত্যিই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব না।”

গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের এই কঠিন যাত্রায় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সফল হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও সামনে দীর্ঘপথ। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, আসন্ন নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দিয়ে চুপ করানো হচ্ছে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাধা।