সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

‘পুলিশের গঠন পদ্ধতি না বদলালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে’

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম

‘পুলিশের গঠন পদ্ধতি না বদলালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে’

ছবি- সংগৃহীত

পুলিশের বর্তমান গঠন পদ্ধতি যদি না বদলায়, তাহলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে বলে মনে করেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আজ রবিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "এই সরকার থেকে হতাশাই পাওয়ার কথা। আমরা কখনো বলিনি যে সবার বাড়িতে গোলাপ ফুল ফুটবে।" চারটা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, "আমি খুব বেশি পারদর্শী নই, যেসব মন্ত্রণালয়ে গেছি। আই হোপ আই স্টে দেয়ার।"

জুলাই আন্দোলনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "দেশে যা ঘটেছে তা অকল্পনীয়। এ ধরনের বিপ্লব আগে দেখা যায়নি। লিডারলেস ইয়ং, এমনকি স্কুলের বাচ্চারাও মারা গেছে। প্রায় এক মাস তারা রাস্তায় ছিল। তাদের কোনো সাহায্য ছিল না। কারা মেরেছে, বলার দরকার নাই। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত টানা ফোনকল পেয়েছি, কোথাও বাড়িতে আগুন, কোথাও থানায় আগুন। ৪০-৪৫টা থানা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হলো।"

তিনি আরও বলেন, "আমি যখন দায়িত্ব নিই, দেখি পুলিশ মোটেও আগ্রহী না। তারা বলছেন— আমরা চাকরি করব না। আমি আল্টিমেটাম দিলাম।" পুলিশের বর্তমান কাঠামোগত দুর্বলতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, "এই পুলিশ এখনো স্ট্রাকচার্ড হয়নি। যদি পুলিশের গঠন-পদ্ধতি না বদলায়, তাহলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে।" তিনি পুলিশ ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে ‘টু-স্টেজ রিক্রুটমেন্ট’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। তার আশঙ্কা, যেভাবে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ঢুকেছে, ভবিষ্যতেও তেমনই হবে, কারণ পুরোটা রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা তিনি জানেন না।

শ্রম মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি তখন "একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরে। কোথায় যাবো, বুঝতে পারছিলাম না।" দায়িত্ব নেওয়ার পরই বেক্সিমকো ইস্যু সামনে আসে, যেখানে ৩৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন এবং প্রতিদিন তারা অন্য গার্মেন্টসকে বিঘ্নিত করে। তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই করতে পারেননি, শুধু একটা কমিটি করতে পেরেছেন।

একটি কোম্পানির আর্থিক কেলেঙ্কারির উদাহরণ টেনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "একটা কোম্পানি ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। কোথায় নিয়েছে, কেউ জানে না। আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি।" তিনি আরও বলেন, "জনতা ব্যাংক একাই দিয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। বারবার ফাইন্যান্স করেছে, অথচ কোনো কোলেটারাল নেই। আপনি শুনেছেন কখনো, একটা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পালিয়ে গেছেন? তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের মধ্যে আছেন গরিবের গভর্নর— তিনিও পলাতক।"

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "আমরা রূপরেখা দিয়ে যাব, বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। হয়তো আমরা অনেক জায়গায় ফেল করেছি। তবে সবখানেই না। আমরা কিছু রূপরেখা রেখে যেতে পারি, কিন্তু বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই।"