আগস্ট ৩, ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। ওই চিঠিতে তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা আগামী 'জুলাই চার্টার ২০২৫'-এ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ১ আগস্ট প্রকাশিত খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক নায়লা জামান খান, অধ্যাপক লিয়াকত আলী ও আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এছাড়া স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদও ওই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, "জাতির ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আপনি নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন—যা শুধু প্রশাসনিক নয়, এক গভীর নৈতিক দায়ও বহন করে। আমরা আপনার এ দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আপনার দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে—যেখানে রাষ্ট্রপরিচালনার মান হবে আরও স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক।"
এতে আরও বলা হয়, "স্বাস্থ্য খাত কোনো একক মন্ত্রণালয় বা সেবার সীমায় আবদ্ধ নয়। এটি জাতীয় উন্নয়নের মূল স্তম্ভ—যা মানবসম্পদের বিকাশ, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সমঅধিকারের মূল ভিত্তি গঠন করে। একটি কার্যকর, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ছাড়া জাতির উন্নয়ন কল্পনাও করা যায় না।"
খোলা চিঠিতে স্বাস্থ্য খাতের বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোর কথা স্বীকার করে বলা হয়েছে, "বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও সত্য যে, একগুচ্ছ গভীর কাঠামোগত দুর্বলতা, শাসন ব্যবস্থায় বিচ্যুতি, এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতার অভাব আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে বারবার থমকে দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো এসেছে এক গুরুত্বর বাস্তবতা থেকে—যা কেবলমাত্র সেবার সম্প্রসারণ বা গুণগত মান বৃদ্ধির পরামর্শ নয় বরং এটি একটি সুসংহত রূপরেখা।"
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ৩টি মূল উপদেশ
খোলা চিঠিতে দেওয়া তিনটি উপদেশ হলো:
১. একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন: একটি স্বাধীন, গণজবাবদিহিমূলক এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করতে হবে—যা দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত রূপকল্প ও বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দেবে। এই প্রতিষ্ঠান হবে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য খাত রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি।
২. সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গঠন: শহর ও গ্রামে বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থাসহ কার্যকর, মানসম্পন্ন ও বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করতে হবে—যা হবে নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তি।
৩. উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন: উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সময়বদ্ধ, দায়িত্বনির্ভর কমিটি গঠন করতে হবে—যা এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করবে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সরাসরি এর তত্ত্বাবধান করবে।
এই উপদেশগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান এবং একটি টেকসই ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।