জুলাই ১৯, ২০২৫, ১১:০৫ এএম
সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই, ২০২৫) দুপুরের সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৬ ঘণ্টা আগেই উদ্যানের ভেতর ও বাইরে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এক নজিরবিহীন দৃশ্যের অবতারণা হয়। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাস, ট্রেন ও লঞ্চের যাত্রীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে শুরু করেন। এই বিশাল জমায়েতকে কেন্দ্র করে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট ও পল্টন এলাকার ট্র্যাফিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে, যা নগর জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। অনেকের হাতেই ছিল দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’র প্রতিকৃতি এবং পরনে ছিল প্রতীক ও মনোগ্রাম সম্বলিত টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। নোয়াখালী ও সিরাজগঞ্জের মতো জেলা থেকে আসা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, যাদের অনেকেই শুক্রবার রাতেই ঢাকায় পৌঁছে উদ্যান এলাকায় অবস্থান নেন। পুরো আয়োজন সুশৃঙ্খল রাখতে দলের প্রায় ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ৬ হাজারই ছিলেন উদ্যানের আশেপাশে। তারা বিভিন্ন গেটে অবস্থান নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা কর্মীদের নিজ নিজ এলাকার জন্য নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করছিলেন, যা দলটির সাংগঠনিক সক্ষমতার পরিচায়ক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এককভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমন বিশাল সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি পাওয়া এবং তা সফলভাবে সম্পন্ন করা জামায়াতে ইসলামীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা। এই জমায়েত কেবল সংখ্যার বিচারেই বড় নয়, বরং এটি দলটির তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক শক্তি এবং কর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতির প্রমাণ। বিশেষ করে যখন তাদের দাবির মধ্যে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সম্প্রতি আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই দাবিগুলো দেশের চলমান রাজনৈতিক বিতর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিটি প্রধান বিরোধী দলগুলোর দাবির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলেও, ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের মতো বিশেষ দাবি এই সমাবেশকে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, জামায়াতের এই বিশাল সমাবেশ এবং তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই জমায়েত যে ক্ষমতাসীন দলসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।
এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামী দেশের রাজনীতিতে তাদের সরব উপস্থিতির জানান দিল। এখন দেখার বিষয়, তাদের এই সাত দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হয়। এই বিশাল শোডাউনের পর দলটির পরবর্তী কর্মসূচি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া এখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন: