আগস্ট ৯, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
প্রাক-ইসলামি আরবকে অনেকেই একটি জনমানবহীন মরুভূমি হিসেবে মনে করে থাকেন। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও শিলালিপি থেকে জানা যায়, হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে এক সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ইয়েমেন, ওমান, হিজাজ, নাজদ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাথরে খোদাই করা এসব লিপি থেকে সেই সময়কার রাজ্য, বাণিজ্য, ধর্ম এবং মানুষের জীবনযাত্রার এক অজানা চিত্র পাওয়া যায়। রোদ ও বালির ঝড়ে ঢাকা পড়া সেই পাথরগুলো এখন নীরব সাক্ষীর মতো ইতিহাসের সেই গল্পই শোনাচ্ছে।
মরুভূমির বুকে রোদ আর বালির নিচে চাপা পড়ে ছিল হাজার বছরের প্রাচীন আরবের এক জটিল ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। পাথরের গায়ে খোদাই করা থামুদি, সাফায়ী, লিহিয়ানীয়, দাদানীয় ও হিমিয়ারি লিপির সেই চিহ্নগুলোই আজ সেই সভ্যতার নীরব সাক্ষী। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, প্রাক-ইসলামি আরব কেবল একটি জনমানবহীন মরুভূমি ছিল না, বরং এটি ছিল এক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক জগৎ।
সৌদি আরব, ইয়েমেন, জর্ডান এবং ইরাকের বিভিন্ন মরু অঞ্চলে পাওয়া শিলালিপিগুলোতে রাজা, দেবতা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প খোদাই করা আছে। এ যেন হাজার বছর আগের কোনো সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট। কখনো তিনশ শব্দের রাজ্যঘোষণা, কখনো বা মাত্র দুটি শব্দ—‘মি ভালোবাসি’। এই লিপিগুলোতে তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
এই শিলালিপিগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র হলেন দেবী আথীরাত। তিনি কেবল দক্ষিণ আরবে নয়, কনানীয় এবং শামের ঐতিহ্যেও পূজিত হতেন। তার নাম বাইবেলীয় কাহিনিতেও পাওয়া গেছে। তিনি ছিলেন সমস্ত দেবতার 'মা', যা সেই প্রাচীন সমাজে নারীর শক্তি ও মর্যাদাকেই তুলে ধরে।
প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. মোহাম্মদ মারক্বতন বলেন, "এই পাথরগুলো শুধু শব্দ নয়, এরা একটি জাতির আত্মার প্রতিচ্ছবি।" তদমোর, আল-উলা, নাজরান ও নাজদ অঞ্চলের এই নিদর্শনগুলো প্রমাণ করে যে, প্রাক-ইসলামি আরব ছিল এক উজ্জ্বল সভ্যতার কেন্দ্র।