রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

পাট জাগ দিতে ভোগান্তি

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৬, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

পাট জাগ দিতে ভোগান্তি

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পাট, যা ‘সোনালি আঁশ’ নামে পরিচিত। বর্ষাকাল পাট পচানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক সময় কৃষকদের পাট জাগ দিতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। চলনবিল, যা একসময় জল ও জলাশয়ে পরিপূর্ণ থাকত, সেখানেও এবার পানির অভাবে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না, যা তাদের জীবিকা ও পরবর্তী ফসল আবাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

পর্যাপ্ত পানির অভাবে চলনবিল অঞ্চলে সোনালি আঁশ পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। মূলত আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল হলেও শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহেও বিল অধ্যুষিত এলাকায় পানির দেখা নেই। খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ে পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পাট জাগ দেওয়ার পানির সংকটে অনেক কৃষক এখনো পাট কাটতে পারছেন না।

 

চলনবিলের সমন্বিত কৃষি তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাটের মৌসুমে চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশে ৮১০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর, শাহজাদপুরে ৩৮৭ হেক্টরসহ মোট নয়টি উপজেলায় তোষা, কেনাফ, মেস্তাসহ কয়েকটি জাতের পাটের আবাদ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে।

শনিবার (২৬ জুলাই) সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার পৌর এলাকার রঘুনিলী মহল্লার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে কিছু জমির কাটা পাট গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা তাড়াশের হেদার খাল এলাকায়। সেখানে মো. আফজাল হোসেন নামের এক কৃষক তার জমির পাট কেটে ফেলে রেখেছেন। তিনিও পানির সংকটে পাট জাগ দিতে পারছেন না।

 

অনেক কৃষক আবার ব্যক্তি মালিকানাধীন জলাশয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় খণ্ডকালীন সময়ের জন্য ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। চলনবিলের কালুপাড়া গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে, অনেক পাটচাষি অপরিষ্কার পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন, যার কারণে পাটের আঁশের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে এবং বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

নওগাঁ এলাকার পাটচাষি মো. আয়নাল প্রমাণিক বলেন, “আমি দুই বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছিল, কিন্তু পানির অভাবে এক বিঘা জমির কাটা পাট এখনো জাগ দিতে পারিনি। এ জন্য জমিতেই পাটগাছ শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে।”

 

কৃষক আব্দুল জব্বার হোসেন, কেরাতম আলী, ফিরোজ হোসেনসহ অনেকে জানান, তাদের জমির পাট কাটার উপযোগী হলেও তারা পাট জাগের পানির সংকটের কথা ভেবে পাট কাটছেন না। অথচ এই পাট কেটে তারা ওই জমিতে রোপা আমনের আবাদ করবেন, যা পিছিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম রাফিউল ইসলাম জানান, “চলনবিল একটি বৃহৎ এলাকা। আর আমার উপজেলায় পাট জাগের জলাশয় ও পানির সংকট আছে।” তবে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা সেন গুপ্তা বলেন, “আমার এলাকায় সবে পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিছু জায়গায় পানির সংকট থাকলেও বেশিরভাগ স্থানে সংকট হওয়ার কথা নয়।”