সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ফরিদপুরে এবার উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার পাট

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

ফরিদপুরে এবার উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার পাট

ছবি- সংগৃহীত

‘পাটের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর জেলায় এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে হঠাৎ বৃষ্টি। দীর্ঘদিন ধরে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পানি সংকটের দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা। এ মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে এবং ফলনও হয়েছে তুলনামূলক ভালো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার দুই হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের পাট উৎপাদিত হয়েছে।

নয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর জেলার পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতির মতো নদী রয়েছে। চরভদ্রাসন ব্যতীত বাকি আটটি উপজেলাতেই ব্যাপক হারে পাট চাষ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এ জেলার মোট আবাদি জমির ৭৫ শতাংশের বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয় এবং প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক কৃষাণ-কৃষাণি এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সর্বত্রই এখন পাট নিয়ে ব্যস্ত চাষিরা। কেউ ক্ষেত থেকে পাট কাটছেন, কেউ আঁটি বেঁধে মাথায় করে জাগ দেওয়ার জন্য পানির কাছে নিচ্ছেন, আবার কেউ জাগ দেওয়া পাট তুলে আঁশ ছাড়িয়ে ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে শুকানোর কাজ করছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুলনামূলক নিচু জমিতে এবার পাটের ফলন ভালো না হলেও উঁচু জমির চিত্রটা ভিন্ন। পাট আবাদে চাষিদের ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। বপনের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ নির্ভর হতে হয়েছে এবং অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়েছে। সালথা উপজেলার চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, "এ মৌসুমে এক মণ পাট বাজারে নেওয়া পর্যন্ত খরচ হচ্ছে চার হাজার টাকার মতো। এখন আপনারাই বলুন, কত টাকা বিক্রি করতে পারলে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো।" পাটচাষিদের দাবি, মণপ্রতি বিক্রয় মূল্য পাঁচ হাজার টাকার কম হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

তারা আরও বলেন, "গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাট কাটার সময় ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে পানি নিয়ে চিন্তা নেই। আশা করছি, পাটে ভালো রঙ আসবে।"

ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, "ফরিদপুরের পাললিক বেলে-দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পাট চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। ফরিদপুরের জলবায়ু এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই পাট উৎপাদনে এ জেলা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ জন্য এ জেলাকে পাটের রাজধানী বলা হয়।"

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহাদুজ্জামান বলছেন, "চাষিরা এবার পাটের ভালো রঙ পাবেন। পাট পচনের সময় অতিবৃষ্টিপাত হচ্ছে, এ জন্য পাটের রঙ ভালো হবে। এ কারণে বাজারদরও সন্তোষজনক হবে।" এই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, এবারের মৌসুমে দুই লক্ষাধিক মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার বাজার মূল্য হবে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।