মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়কের বেহাল দশা : ৬ বছরেও শেষ হয়নি কাজ

মোস্তাফিজুর রহমান

আগস্ট ৩, ২০২৫, ০২:২৮ পিএম

সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়কের বেহাল দশা : ৬ বছরেও শেষ হয়নি  কাজ

ছবি- দিনাজপুর টিভি

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া চৌমাথা থেকে কচুয়াহাট পর্যন্ত সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়কের উন্নয়ন কাজ ২০১৯ সালে শুরু হলেও তা আজও শেষ হয়নি। কাজ শুরুর কিছুদিন পরই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সড়কটির উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে রাস্তাটির ইট-খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে গর্তে পানি জমে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের প্রায় ৭৫-৮০ ভাগ কাজ এখনও অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের মতে, সড়কটি এখন যেন 'গলার কাঁটা' হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাঘাটা উপজেলা কার্যালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রুরাল কানেক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (RCIP)-এর আওতায় ৬,৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক উন্নয়নের টেন্ডার হয়েছিল। এতে সড়ক প্রশস্তকরণ, চারটি বক্স কালভার্ট, চারটি ইউ ড্রেন, গাইডওয়াল ও কার্পেটিংয়ের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৬ টাকা। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এইচটিবিএল-সিসিসিজেভি ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর প্রকল্পের কাজ শুরু করে। কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় ছিল ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু ছয় বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়নি।

স্থানীয় ভ্যানচালক মোন্নাফ মিয়া বলেন, "সড়কটিতে খোয়া আর গর্তের ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে শরীর ব্যথা করে। গাড়ির ঝাঁকুনিতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ভ্যানের টায়ার দুই মাসেই নষ্ট হয়ে যায়।"

কচুয়াহাট এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান জানান, "প্রতিদিন স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এই সড়কে দুর্ভোগে পড়ে। অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় গাড়ি পাওয়া যায় না। বর্ষায় হাঁটু পানি জমে থাকে।"

ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, "সড়কটির দুরবস্থার কারণে আমাদের ভরতখালী হয়ে ঘুরে কচুয়া যেতে হয়। এতে খরচও বাড়ে, সময়ও নষ্ট হয়। ইতোমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।"

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী নয়ন রায় জানান, "পুরনো ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। অসমাপ্ত কাজের হিসাব ঢাকা প্রজেক্ট ডিরেক্টর (PD) অফিসে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু RCIP প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে, তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সড়কের কাজ অসম্পূর্ণ ছিল, সেগুলো নিয়ে ১২টি প্যাকেজে নতুন কাজের প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে পুনরায় টেন্ডার দিয়ে বাকি কাজ শুরু হবে।"

এ বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করার জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।