আগস্ট ৭, ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
দীর্ঘ ৩৭ বছর পর আবারও বিশ্বখ্যাত ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের তরুণ সাঁতারু নাজমুল হক হিমেল। কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলীর এই কৃতি সন্তান ২৯ জুলাই যুক্তরাজ্যের সময় বিকেল ৩টায় চ্যালেঞ্জ শুরু করে সফলভাবে ৩৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেল অতিক্রম করেন। তার এই কীর্তি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ইংলিশ চ্যানেল হলো যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী সমুদ্রপ্রণালী। এই প্রণালীর দূরত্ব ৩৩.৮ কিলোমিটার। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে একজন সাঁতারুকে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হয়। নাজমুল হক হিমেল ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে এই ঐতিহাসিক অভিযান সফল করেছেন।
নাজমুল হক হিমেলের জন্ম কিশোরগঞ্জের নিকলীর মীরহাটি গ্রামে। তার বাবা আবুল হাসেম ছিলেন আশির দশকের জাতীয় সাঁতারু। বাবার হাতেই ১৯৯৭ সালে সাঁতারে হাতেখড়ি হয় হিমেলের। এরপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাঁতার শেখা শুরু করেন এবং বিভিন্ন কোচের অধীনে দীর্ঘ সময় প্রশিক্ষণ নেন।
সাঁতারু হিসেবে নাজমুলের ক্যারিয়ার খুবই সমৃদ্ধ। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে তিনি ২০টি স্বর্ণ এবং ১৫টি রৌপ্য পদক জিতেছেন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ৫টি স্বর্ণ ও ৪টি রৌপ্য পদক অর্জন করেন এবং বয়সভিত্তিক সাঁতারে ৬টি জাতীয় রেকর্ড গড়েন।
২০০৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ইন্দো-বাংলা গেমসে তিনি একটি স্বর্ণ এবং দুটি রৌপ্য পদক জয় করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে গিয়েও তিনি তার সাঁতার অব্যাহত রাখেন এবং বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানেও তিনি সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন এবং উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। চীনে দীর্ঘদিন তিনি কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
নাজমুলের এই অর্জনে তার নিজ এলাকাসহ পুরো দেশে আনন্দের বন্যা বইছে। জাতীয় পর্যায়ের সাঁতারু নাদিমুল হক ও পুষ্প আক্তারের মতো অনেকেই তাকে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, হিমেলের এই সাফল্য বাংলাদেশের আরও তরুণ সাঁতারুদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে উৎসাহিত করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশের ব্রজেন দাস ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। তারপর ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক এবং সবশেষ ১৯৮৭ সালে মোশাররফ হোসেন এই চ্যালেঞ্জ জয় করেছিলেন।