আগস্ট ২০, ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর স্থানীয় সালিশে ৫০ হাজার টাকায় আপসের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের আলেচু পাড়ায় সম্প্রতি একই এলাকার পাঁচজন যুবক পর্যায়ক্রমে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় মেম্বার, হেডম্যান ও পাড়া প্রধানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সামাজিক সালিশের আয়োজন করা হয়। এই সালিশে মারমা জনগোষ্ঠীর সামাজিক রীতিনীতি অনুসারে ভুক্তভোগীর পরিবারকে চিকিৎসার খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে বিষয়টি আপস করার চেষ্টা করা হয়।
স্থানীয় মেম্বার গংবাসে মার্মার ভাষ্যমতে, সালিশে ভুক্তভোগী জানায়, চলতি মাসের শুরুর দিকে রাংমেশের মার্মার ছেলে শৈহাইনু মার্মা তাকে প্রথম ধর্ষণ করে। পরে শৈহাইনু মার্মার মাধ্যমে তার অন্য বন্ধুরা বিষয়টি জানতে পারে এবং সামাজিক ভয় দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে তারা ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগীর পরিবার বিষয়টি জানার পর সবার মধ্যে জানাজানি হয়। এই ঘটনার পর পাড়া প্রধান থোয়াইসা মার্মার উপস্থিতিতে এই বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যেখানে অভিযুক্ত পাঁচজনকে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাউছার তাৎক্ষণিকভাবে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাউছার ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত উহাইসিং, ক্যহ্লাওয়াং ও ক্যসাইওয়াং মারমা নামে তিনজনকে আটক করেছে। তাদের বান্দরবান সদর থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে এবং বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
ভুক্তভোগীর বাবার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করেন। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে সত্য ঘটনা বলতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাউছার বলেন, “এমন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে কোনো আপস নয়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”