মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ঝালকাঠিতে নদী ভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি-কবরস্থান, দিশাহারা মানুষ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম

ঝালকাঠিতে নদী ভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি-কবরস্থান, দিশাহারা মানুষ

ছবি- সংগৃহীত

নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য নদীভাঙন একটি পুরোনো সমস্যা। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই সমস্যা এখন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সুগন্ধা নদীর তীরের ১০টি গ্রামের চিত্র বর্তমানে এমনই। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই ভাঙনে অসংখ্য পরিবার তাদের বসতভিটা ও জমিজমা হারিয়েছে। এক সময়ের সম্পন্ন পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কবরস্থান থেকে শুরু করে স্কুল, মসজিদ—সবকিছুই চলে যাচ্ছে নদীর পেটে। স্থানীয়রা বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদীপাড়ের মানুষের জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তায়।

সুগন্ধা নদীর তীব্র ভাঙনে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ১০টিরও বেশি গ্রাম এখন বিলীন হওয়ার পথে। বছরের পর বছর ধরে চলা এই ভাঙনে শত শত পরিবার তাদের সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক এতটাই যে, অনেকেই বলছেন, “মানুষ মরলে কবর দেওয়ার জায়গাও নাই।”

নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের বাসিন্দা মাকসুদা বেগম (৭০) জানান, তার স্বামীর দুটি বাড়িই নদীতে বিলীন হয়েছে। এমনকি তার স্বামীর কবরটিও এখন নদীগর্ভে। একই গ্রামের রশিদ মোল্লা (৫০) ৫০ বছর ধরে ভাঙন দেখে আসছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার দেখেননি।

নদী ভাঙনের শিকার গ্রামগুলো হলো তিমিরকাঠি, দরিরচর, খোজাখালী, মল্লিকপুর, সিকদারপাড়া, বহরমপুর, ষাটপাকিয়া, কাঠিপাড়া, এবং অনুরাগ। এর মধ্যে খোজাখালী, দরিরচর ও তিমিরকাঠি গ্রামের বেশিরভাগ অংশই নদীতে চলে গেছে। হেপী বেগম (৩৮) নামের এক বাসিন্দা বলেন, “নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন ঘরের সঙ্গে এসে ঠেকেছে। আমরা ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন মোল্লা জানান, তারা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙনের বিষয়ে অবগত করেছেন। তবে এখনো কোনো সমাধান মেলেনি। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, “ঝালকাঠি ও নলছিটির ভাঙন রোধে একটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। অন্যান্য ভাঙন স্থানেও জরিপ করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলাকাবাসী এবং জনপ্রতিনিধিদের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, নদী ভাঙন একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হলেও এর সমাধান এখনো অনিশ্চিত।