আগস্ট ১০, ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে কেন্দ্রের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়া ছাত্রী আনিসা আহমেদকে নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অসুস্থ মায়ের হাসপাতালে ভর্তির কারণে দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছানো এবং পরীক্ষা দিতে না পারার তার দাবি নিয়ে ব্যাপক সহানুভূতি তৈরি হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ড তাকে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল। তবে, দুটি তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে আনিসার দেওয়া তথ্যের সত্যতা মেলেনি, যার ফলে তাকে আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে, বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে না পেরে সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনিসা আহমেদ। তিনি দাবি করেন, অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় তার কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়। দেরির কারণে তাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আনিসার এই ছোটাছুটি ও কান্নার ছবি-ভিডিও দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটিজেনরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাকে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার জন্য জোরালো দাবি ওঠে, যা মেনে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ড তাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
তবে, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বোর্ড দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং আরেকটি কমিটি করা হয় আনিসার পরীক্ষা কেন্দ্র সরকারি বাঙলা কলেজের পক্ষ থেকে। দুই পক্ষের তদন্তেই ঘটনা সম্পর্কে আনিসার বর্ণনা অনুযায়ী কোনো সত্যতা মেলেনি।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার রোববার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "ওই ছাত্রীর (আনিসা) পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাইয়ের কাজ করা হয়েছে। সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।"
যদিও আনিসাকে প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না, তবুও তার পাসের একটি বিকল্প পথ খোলা আছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানান, আনিসা যদি বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় ৬৬ নম্বর পায়, তাহলে দুই পত্র (বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) মিলিয়ে তাকে পাস করিয়ে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তার রেজাল্ট আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও ঢাকা বোর্ডের দুজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আনিসা যেভাবে তথ্য দিয়েছিল, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তার মা ওই হাসপাতালের নিয়মিত রোগী ছিলেন এবং সেদিন সকালে যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, এমন তথ্যেরও সত্যতা মেলেনি। এমনকি হাসপাতালে ভর্তির যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "আনিসা আমাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। ঢাকা বোর্ড ও বাঙলা কলেজ যে তদন্ত কমিটি করেছিল, তারা আমাদের কাছে হাসপাতালে ভর্তির স্লিপসহ কিছু তথ্য-উপাত্ত চেয়েছিল। আমরা সেগুলো আনিসার কাছ থেকে নিয়ে কমিটিকে দিয়েছিলাম। এখন শিক্ষার্থী যদি ভুয়া স্লিপ এনে দেয়, তাহলেও তো আমাদের কিছু করার নেই। সেটার সত্যতা তদন্ত কমিটি যাচাই করেছে। যতদূর জেনেছি, ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় বোর্ড তার আর পরীক্ষা নিচ্ছে না। এখন যে উপায়টা আছে, তা হলো দুই পত্র মিলিয়ে ৬৬ নম্বর পেলে পাস ধরা হয়। সেক্ষেত্রে বাংলা দ্বিতীয়পত্রে আনিসা ৬৬ পেলে এবং বাকি সব বিষয়ে পাস করলে; সে পাস করে যাবে।"