আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৯:৪৬ এএম
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, শুধুমাত্র যোগাযোগ রক্ষার প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি এখন মতামত প্রকাশ, ব্র্যান্ডিং এবং আয়েরও একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন যে ভালো মানের কনটেন্ট পোস্ট করা সত্ত্বেও তাদের ফেসবুকে ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ছে না। এর পেছনে প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সমস্যাটির ১০টি প্রধান কারণ উঠে এসেছে।
১. ভুল সময়ে পোস্ট করা: আপনি যখন পোস্ট দেন, তখন আপনার ফলোয়াররা যদি অনলাইনে না থাকে, তাহলে সেই পোস্টের 'রিচ' বা পৌঁছানোর ক্ষমতা কমে যায়। প্রতিটি পেজের নিজস্ব ইনসাইট থেকে ফলোয়ারদের সক্রিয় থাকার সেরা সময়টি বের করে সেই সময়েই নিয়মিত পোস্ট করা উচিত।
২. অতিরিক্ত পোস্ট: দিনের পর দিন অতিরিক্ত পোস্ট দিলে ফলোয়াররা বিরক্ত হয়ে আনফলো করতে পারে। ফেসবুকের অ্যালগরিদমও একই দিনে অতিরিক্ত পোস্টকে কম গুরুত্ব দেয়।
৩. পরিষ্কার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি না থাকা: আপনার প্রোফাইল ছবি, কভার ফটো, লেখার ধরণ এবং ভাষা—এসবের মধ্যে যদি কোনো সামঞ্জস্য না থাকে, তাহলে মানুষ আপনার পেজটিকে সহজে মনে রাখতে পারবে না। একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
৪. পোস্টের ধারাবাহিকতা না থাকা: একদিনে কয়েকটি পোস্ট করে এরপর কয়েক দিন কোনো পোস্ট না দিলে ফেসবুক অ্যালগরিদম আপনার পোস্টের রিচ কমিয়ে দেয়। এছাড়া, ধারাবাহিকতা না থাকলে ফলোয়াররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
৫. শুধুমাত্র নিজের প্রচারণা: যদি আপনার পেজ থেকে শুধু নিজের পণ্য, পরিষেবা বা সাফল্য নিয়ে পোস্ট করা হয়, তাহলে ফলোয়াররা বিরক্ত হতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮০ শতাংশ পোস্ট তথ্য, বিনোদন বা মূল্যবান কনটেন্ট হতে হবে এবং মাত্র ২০ শতাংশ হতে পারে নিজের প্রচার।
৬. নিম্নমানের কনটেন্ট: এলোমেলো ফ্রেমিং, ঝাপসা ছবি বা ভিডিও এবং খারাপ অডিওযুক্ত কনটেন্ট দর্শককে প্রথমেই হতাশ করে। ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মে ভিজ্যুয়াল কোয়ালিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৭. দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা: কমেন্টে উত্তর না দেওয়া, ইনবক্সে রেসপন্স না করা বা লাইভে আসা ফলোয়ারদের প্রশ্নের উত্তর না দিলে তারা উপেক্ষিত বোধ করেন। অ্যালগরিদমও কম এনগেজমেন্ট দেখে আপনার পোস্টের রিচ কমিয়ে দেয়।
৮. একই ধরনের কনটেন্ট: বারবার একই ধরনের মিম, খবর বা একই স্টাইলে পোস্ট করলে মানুষ দ্রুত আগ্রহ হারায়। কনটেন্টে বৈচিত্র্য আনা এবং নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করা জরুরি।
৯. কপি-পেস্ট কনটেন্ট: অন্য কোনো পেজের কনটেন্ট হুবহু কপি করলে দর্শক আপনাকে অনন্য মনে করবে না। ফেসবুক অ্যালগরিদমও কপি করা কনটেন্টকে কম গুরুত্ব দেয়।
১০. ট্রেন্ড উপেক্ষা করা: ফেসবুকে চলমান ট্রেন্ড, ভাইরাল চ্যালেঞ্জ বা প্রাসঙ্গিক আলোচনায় অংশ না নিলে নতুন অডিয়েন্স আকর্ষণ করা কঠিন হয়।
এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য শুধু ভালো কনটেন্ট তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, বরং এর পেছনে একটি সুচিন্তিত কৌশল এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলো মাথায় রাখা জরুরি।