জুলাই ২৬, ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কাটসিনা রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক সংকট বিদ্যমান। ডাকাতদের ক্রমবর্ধমান হামলার কারণে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং কৃষি কাজ ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো স্থানীয় মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দাতাদের পক্ষ থেকে তহবিল প্রত্যাহার করার ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যার করুণ পরিণতি হিসেবে শত শত শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নাইজেরিয়ার কাটসিনা রাজ্যে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে কমপক্ষে ৬৫২ জন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ভয়াবহ মানবিক সংকটের জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের তহবিল কমানোকে দায়ী করেছে মেডেসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ), যা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস নামেও পরিচিত। শুক্রবার (২৫ জুলাই) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এমএসএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "আমরা বর্তমানে বিশাল বাজেট কাটছাঁট প্রত্যক্ষ করছি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে। এটি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।" সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই বছর কাটসিনায় তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা প্রায় ২০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই খবর এমন এক সময়ে এসেছে, যখন জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা (ইউএন ফুড এজেন্সি) ঘোষণা করেছে যে, তারা নাইজেরিয়ার বিদ্রোহ-কবলিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা স্থগিত করতে বাধ্য হবে, কারণ তাদের মজুদ শেষ হয়ে গেছে।
নাইজেরিয়ার সরকারও এই সংকট মোকাবিলায় চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতে তহবিল প্রত্যাহারের ঘাটতি পূরণের জন্য নাইজেরিয়া এই বছর ২০০ বিলিয়ন নাইরা (১৩০ মিলিয়ন ডলার) বাজেট করেছে।
কাটসিনা রাজ্যে এই সংকটের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্রমবর্ধমান ডাকাতি এবং নিরাপত্তাহীনতা। ডাকাতদের কার্যকলাপের কারণে অনেক মানুষ তাদের খামার ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকার স্থানীয় বেসামরিক নজরদারি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘটনা গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মানবিক সংস্থাগুলো জরুরি ভিত্তিতে তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলোকে তাদের মানবিক সহায়তা কর্মসূচিগুলো পুনরায় চালু করার জন্য অনুরোধ করছে। নাইজেরিয়ার এই শিশুদের ভবিষ্যৎ এখন আন্তর্জাতিক সমাজের দ্রুত পদক্ষেপের উপর নির্ভরশীল।
আপনার মতামত লিখুন: