সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ফেসবুকের ‍‍`শুদ্ধি অভিযান :১ কোটি আইডি ডিলিট, মৌলিক কনটেন্টে অগ্রাধিকার

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০৯:২৮ পিএম

ফেসবুকের ‍‍`শুদ্ধি অভিযান :১ কোটি আইডি ডিলিট, মৌলিক কনটেন্টে অগ্রাধিকার

ছবি- সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক সম্প্রতি প্রায় ১ কোটি ভুয়া ও স্প্যাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে। ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে, স্প্যাম ও ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই এই বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে, তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, আগামী দিনে আরও অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা হবে, যা প্ল্যাটফর্মটির একটি বড় ধরনের 'শুদ্ধি অভিযানের' ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি গত ১৪ জুলাই এক বিবৃতিতে জানায়, তারা প্রথম ধাপে প্রায় ৫ লাখ অ্যাকাউন্টকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে, যেগুলো স্প্যাম ছড়ানো, ভুয়া এনগেজমেন্ট বা প্রতারণামূলক আচরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসব অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ফেসবুক কমেন্ট হ্রাস, কনটেন্টের বিস্তার সীমিত করা এবং মনেটাইজেশন বন্ধ করার মতো কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এছাড়াও, মেটা জানায়, প্রায় ১ কোটি প্রোফাইল মুছে ফেলা হয়েছে যারা বিভিন্ন বিখ্যাত কনটেন্ট নির্মাতাদের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। অর্থাৎ, ভুয়া পরিচয়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় নির্মাতার নামে কনটেন্ট শেয়ার করছিল, যা ডিজিটাল প্রতারণার একটি সাধারণ রূপ। ফেসবুক আরও জানায়, তারা এমন অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে, যেগুলো একাধিকবার একই ধরনের মিম বা ভিডিও বারবার পোস্ট করে, কিংবা ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে আসল নির্মাতাদের ছদ্মবেশে হাজির হয়।

কনটেন্টে মৌলিকতার ওপর জোর: ফেসবুক এই 'শুদ্ধি অভিযানের' অংশ হিসেবে মৌলিক কনটেন্টের ওপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে। তারা জানিয়েছে, নতুন করে অ্যালগরিদম আপডেট করা হচ্ছে, যাতে অরিজিনাল কনটেন্ট শেয়ারকারীরা অগ্রাধিকার পায়। মেটা বলছে, ‘আপনার নিউজ ফিডকে উন্নত করতে এবং মূল কনটেন্টের মূল্যায়ন বাড়াতে আমরা আরও জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, যারা নিজস্ব তৈরি কনটেন্ট নয়, বরং অন্য সোর্স থেকে নেওয়া ভিডিও বা পোস্ট শেয়ার করেন, তাদের অ্যাকাউন্টে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

ফেসবুকের পরামর্শ ও উন্নত প্রযুক্তি: কনটেন্ট শেয়ার করার ক্ষেত্রে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে—দৃশ্যমান তৃতীয় পক্ষের ওয়াটারমার্ক থাকলে তা ব্যবহার না করা, পুনর্ব্যবহৃত কনটেন্ট এড়িয়ে চলা, উচ্চমানের ক্যাপশন ব্যবহার করা এবং খুবই ছোট ও অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও না পোস্ট করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফেসবুক আরও জানিয়েছে, নজরদারির ক্ষেত্রে তারা এখন আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এই প্রযুক্তি ডুপ্লিকেট কনটেন্ট সহজে শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কনটেন্টের বিস্তার রোধ করে। একই সাথে, তারা মূল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে চায়। এজন্য একটি পরীক্ষামূলক ফিচার চালু হচ্ছে, যেখানে ডুপ্লিকেট ভিডিওর পাশে মূল ভিডিওর লিংক যোগ করা হবে, যাতে দর্শকরা সহজে আসল কনটেন্টে পৌঁছাতে পারেন।

পরিশেষে বলা যায়, ফেসবুক এখন বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট দমন, মৌলিক কনটেন্টের স্বীকৃতি, কনটেন্টের মান বজায় রাখা এবং এআই ভিত্তিক প্রযুক্তিতে বিপুল বিনিয়োগ—এসব কিছুই দেখাচ্ছে যে, ভবিষ্যতের ফেসবুক হতে চলেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কাঠামোবদ্ধ ও নীতিনির্ভর। এটি প্ল্যাটফর্মের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।