সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
জাতীয়

‘সৎ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থাকা অফিসাররা পদোন্নতির দাবিদার’: ড. ইউনূসের নির্দেশনা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম

‘সৎ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থাকা অফিসাররা পদোন্নতির দাবিদার’: ড. ইউনূসের নির্দেশনা

সংগৃহীত

জাতীয় উন্নয়নে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং তাদের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও মেধার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার (২০ জুলাই, ২০২৫) সকালে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেছেন যে, "সৎ, নীতিবান, পেশাদার, নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থাকা অফিসাররা উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার।" পদোন্নতির জন্য অফিসারদের পেশাগত দক্ষতা, বিশ্বস্ততা এবং নিযুক্তিগত উপযুক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করতে তিনি নির্বাচনী পর্ষদের সদস্যদের নির্দেশনা দেন। তার এই বক্তব্য জাতীয় জীবনে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।

 

আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সেনা সদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব বেশ কিছু সময় ধরে পালন করে যাচ্ছেন। দেশের প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ত্যাগের জন্য তিনি সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তার এই বক্তব্য সেনাবাহিনীর প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থার প্রতিফলন।

 

 

মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব শহীদ, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর শহীদসহ বীর সেনানীদের স্মরণ করেন। এসময় তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে আহত ও শহীদ সেনা সদস্যদের। একইসঙ্গে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সব ছাত্র-জনতাকে। এই স্মারক আলোচনা তার বক্তব্যে এক গভীর আবেগিক মাত্রা যোগ করে এবং দেশের ইতিহাস ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রতি তার সংবেদনশীলতা তুলে ধরে।

 

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতি এবং তার নির্দেশনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে এদিন প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন এবং পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লেখেন। এই পর্ষদের প্রথম পর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবির যোগ্য কর্মকর্তারা পরবর্তী পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন। এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও মেধার ওপর জোর দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যা এই পর্ষদের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্য বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৎ, নীতিবান, পেশাদার এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থাকা অফিসারদের পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতাকে আরও সুসংহত করবে। এটি দেশের সার্বিক জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়। এই নির্দেশনা আগামী দিনে সেনাবাহিনীর পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।