বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২

মোশাররফের ঢাকা সফর ও একাত্তরের সেই ‘দুঃখপ্রকাশ’

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২৬, ২০২৫, ১০:০৯ পিএম

মোশাররফের ঢাকা সফর ও একাত্তরের সেই ‘দুঃখপ্রকাশ’

ছবি- সংগৃহীত

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক মন্তব্যের সূত্র ধরে আবারও আলোচনায় এসেছে ২০০২ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক ও প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের বাংলাদেশ সফর। ইসহাক দাবি করেছেন, মোশাররফ ২০০২ সালের ঢাকা সফরে প্রকাশ্যে একাত্তরের ঘটনার 'সমাধান' করে গেছেন।

মূলত ২০০০ সালে নয়, বিএনপি-নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের জুলাইয়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন পারভেজ মোশাররফ। তার এই সফরের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল। ওই সময় বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সামরিক শাসন নিয়ে নিন্দা ও একজন পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে চরম টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।

মোশাররফের এই সফর ঘিরে ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনগুলো দেশজুড়ে হরতাল ও বিক্ষোভের ডাক দেয়, মোশাররফকে 'সামরিক স্বৈরশাসক' আখ্যা দিয়ে তার সফরকে 'অবাঞ্ছিত' ও 'অযাচিত' ঘোষণা করে। এছাড়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনও মোশাররফের অনুষ্ঠান বয়কট করার আহ্বান জানায়। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জমিরউদ্দীন সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।

সফরের শুরুতেই মোশাররফ ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সেখানকার পরিদর্শন বইয়ে তিনি লেখেন, ১৯৭১ সালের 'দুর্ভাগ্যজনক সময়ে' ঘটে যাওয়া 'বাড়াবাড়িগুলো দুঃখজনক'। তিনি 'উদারতার চেতনা দিয়ে অতীতকে কবর দেওয়ার' কথা বলেন এবং 'দুঃখপ্রকাশ' করেন।

পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভোজসভায় মোশাররফ আবারও ১৯৭১ সালের 'বেদনা' ভাগ করে নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং 'দুটি জাতির ওপর গভীর ক্ষত রেখে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য' 'আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ' করেন।

মোশাররফের এই দুঃখপ্রকাশ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার বক্তব্যকে 'পুরোনো ক্ষত প্রশমিত করতে সহায়ক' বলে স্বাগত জানান। অন্যদিকে, তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ মোশাররফের 'অস্পষ্ট ভাষায়' দুঃখপ্রকাশকে যথেষ্ট মনে করেনি। তাদের দাবি ছিল, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ১৯৭১ সালের নৃশংসতার জন্য 'সুনির্দিষ্ট ও নিঃশর্তভাবে ক্ষমা' চাওয়া উচিত। দেশের কিছু গণমাধ্যম মোশাররফের বক্তব্যকে 'ভালো অঙ্গভঙ্গি' বললেও অন্য একটি অংশ এটিকে 'কসমেটিক' এবং 'ঐতিহাসিক অপরাধ এড়িয়ে যাওয়ার একটি ধূর্ত প্রচেষ্টা' বলে অভিহিত করে।

ওই সফরে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সম্পদ বণ্টন এবং আটকেপড়া উর্দুভাষী পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলোও আলোচনায় এসেছিল। তবে এ বিষয়ে পাকিস্তানের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।