জুলাই ২০, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
মানবজীবনে অভাব-অনটন একটি কঠিন বাস্তবতা, যা মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং ইবাদত-বন্দেগিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইসলাম মানুষকে শুধু পরকালের মুক্তির পথই দেখায় না, বরং দুনিয়ার জীবনেও শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের নির্দেশনা দেয়। এক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা এবং নির্দিষ্ট কিছু দোয়া ও আমলের মাধ্যমে অভাব-অনটন থেকে মুক্তি লাভের পথ দেখানো হয়েছে। তবে, এর পাশাপাশি হালাল পথে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা ও পরিশ্রমের ওপরও ইসলাম গুরুত্বারোপ করে।
অভাব-অনটন থেকে মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমলসমূহ:
ইসলামি শরিয়তে অভাব দূর করার এবং রিজিক বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু দোয়া ও আমলের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর নিয়মিত অনুশীলন আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত লাভের পথ খুলে দেয়।
-
১. ইস্তেগফার ও তওবা: অভাব-অনটনের একটি অন্যতম কারণ হলো গুনাহ। তাই গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে বেশি বেশি ইস্তেগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন: "তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি বড় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগান তৈরি করবেন ও নদী প্রবাহিত করবেন।" (সূরা নূহ: ১০-১২)
-
২. সূরা ওয়াকিয়া পাঠ: হাদিসে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনো অভাবগ্রস্ত হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ পাঠ করবে, তাকে কখনো দারিদ্র্য স্পর্শ করবে না।” (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান)। এটি রিজিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আমল।
-
৩. সূরা ক্বাফ ও সূরা আর-রাহমান পাঠ: কিছু আলেমের মতে, এই সূরাগুলোও অভাব দূর করতে সাহায্য করে।
-
৪. সালাতুত তাসবিহ ও সালাতুল হাজাত: নিয়মিত সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায় করা এবং কোনো বিশেষ প্রয়োজন পূরণের জন্য সালাতুল হাজাত (বিশেষ নামাজ) আদায় করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা উচিত।
-
৫. নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ: কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত বেশ কিছু দোয়া অভাব দূর করতে সাহায্য করে। যেমন:
-
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনার দোয়া: "اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ" (আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান-নার) অর্থাৎ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করো, আর আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।" (সূরা বাকারা: ২০১)
-
রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়া: "اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ" (আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াকা) অর্থাৎ: "হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার হালাল রিজিক দিয়ে হারাম থেকে যথেষ্ট করো এবং তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে তুমি ছাড়া অন্যদের থেকে স্বাবলম্বী করে দাও।" (তিরমিজি)
-
পেরেশানি ও ঋণ মুক্তির দোয়া: "اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ" (আল্লাহুম্মা ইন্নি আ'উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ'উযু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আ'উযু বিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আ'উযু বিকা মিন গলাবাতিত দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজালি) অর্থাৎ: "হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।" (বুখারি)
-
-
৬. দান-সদকা: দান-সদকা করলে রিজিক বাড়ে এবং বিপদ দূর হয়। আল্লাহ তায়ালা দানকারীদের প্রতিদান দেন।
-
৭. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল: আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখা (তাওয়াক্কুল) এবং সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলা (তাকওয়া) রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। "যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (মুক্তির) পথ করে দেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করে না।" (সূরা তালাক: ২-৩)
আপনার মতামত লিখুন: