আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম
দক্ষিণ কোরিয়া, এশিয়া তো বটেই বিশ্ব ফুটবলেরও পরাশক্তি। সেই কোরিয়ার বিপক্ষে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল বাছাইপর্বে প্রথমে গোল করে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-৬ গোলের বড় হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল। প্রথমার্ধে খেলা ১-১ গোলে সমতা থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের মেয়েরা খেই হারায় এবং এলোমেলো ফুটবল খেলে।
আজ দিনের শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ। খেলা শুরুর প্রথম আক্রমণেই বাংলাদেশ গোলের সুযোগ তৈরি করে। ১৫ মিনিটে এক কাউন্টার অ্যাটাকে মোসাম্মৎ সাগরিকা ও শান্তি মারডি নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে প্রবেশ করেন। বক্সের বাঁ দিক থেকে শান্তি বল বাড়ান, যা কোরিয়ান গোলরক্ষকের হাতের নিচ দিয়ে সামনে চলে আসে। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমতী তৃষ্ণা রাণী টোকা দিয়ে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি। এতে লাওসের স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা আনন্দে মেতে উঠেন। বয়স ভিত্তিক হলেও কোরিয়ার জালে বাংলাদেশের গোল ফুটবলে বড় আনন্দের উপলক্ষ্য ছিল।
তবে বাংলাদেশের এই লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তিন মিনিট পরই কোরিয়া খেলায় সমতা আনে। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে বাংলাদেশ নারী দলের হাই লাইন ডিফেন্স কৌশল এই গোল হজমের কারণ হয়। সেন্টার লাইনের একটু নিচে থাকা বাংলাদেশের ডিফেন্স কোরিয়ার এক লং বলে পরাস্ত হয়। দ্রুতগতির কোরিয়ান ফরোয়ার্ডরা বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলরক্ষক স্বর্ণাকে একা পেয়ে গোল করেন।
ম্যাচে সমতা আসার পর কোরিয়া বাংলাদেশকে চেপে ধরে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকারের ওপর কিছু সময়ের জন্য ঝড় বয়ে যায়, যা তিনি অনেকটা ঠান্ডা মাথায় সামাল দিয়েছেন। আবার কিছু আক্রমণ দারুণ দক্ষতায় প্রতিহত করেছেন গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণী। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে পোস্ট থেকে অনেক সামনে বেরিয়ে এসেছিলেন স্বর্ণা, তবে কোরিয়ান ফরোয়ার্ডের পায়ে বল থাকলেও তিনি তা প্রতিহত করতে সক্ষম হন। কোরিয়ার ফরোয়ার্ডরা প্রথমার্ধে একাধিক গোল মিসও করেছে। কোচ পিটার বাটলার প্রথমার্ধেই দুইজন খেলোয়াড় বদল করেন, যার মধ্যে গত ম্যাচে অলিম্পিক গোল করা শান্তি মারডিকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই উঠিয়ে নেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় পুরো সময় বাংলাদেশ অর্ধেই খেলা হয়েছে এবং কোরিয়া ক্রমেই ব্যবধান বড় করেছে। ৬১ মিনিটে আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণে অধিনায়ক চো হেং আগুয়ান গোলরক্ষক স্বর্ণাকে পরাস্ত করে গোল করেন। এই গোলটিও বাংলাদেশ একই কৌশলে হজম করেছিল। পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স থিওরি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই তত্ত্ব কার্যকর নয়, যা কোরিয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এক সঙ্গে দুই খেলোয়াড় বদলেও খেলার পরিস্থিতি আর বদল করতে পারেননি বাটলার।
৮৪ মিনিটের দিকে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার কোরিয়ান ফরোয়ার্ডকে ফাউল করলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কোরিয়ান অধিনায়ক পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ৪-০ করেন। শেষ দশ মিনিটে আরও দুই গোল হজম করে বাংলাদেশ। লাওসে ভিয়েনতিয়েনে বাংলাদেশের শেষটা হলো দুঃস্বপ্নের মতোই।
এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে ৩২ দল আট গ্রুপে খেলছে। আট গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও সেরা তিন রানার্স আপ আগামী বছর থাইল্যান্ডে মূল পর্বে খেলবে। বাংলাদেশ আজ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করলে এইচ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে খেলতে পারত। কোরিয়ার বিপক্ষে ৫ গোলের ব্যবধানে হারায় এখন বাংলাদেশের তিন ম্যাচ শেষে ৬ পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান ৫। ফলে সেরা তিন রানার্স আপের মধ্যে থাকা খানিকটা শঙ্কার মধ্যেই পড়েছে। আজ গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়া কাপ খেলা।