সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সাগরিকার চার গোলে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা বাংলাদেশের:

স্পোর্টস ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ১১:০৯ এএম

সাগরিকার চার গোলে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা বাংলাদেশের:

ছবি- সংগৃহীত

কিংস অ্যারেনা, ঢাকা: শেষ বাঁশি বাজতেই কিংস অ্যারেনার সবুজ গালিচায় আছড়ে পড়ল বাঁধভাঙা উল্লাস। ডাগআউট থেকে ছুটে এলেন বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়রা, জড়িয়ে ধরলেন ম্যাচের নায়িকা সাগরিকাকে। আকাশে উড়ল স্মোক ফ্লেয়ারের লাল-সবুজ ধোঁয়া, আর দর্শকরা মেতে উঠলেন চ্যাম্পিয়নশিপের আনন্দে। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে শূন্যে তুলে আফঈদা খন্দকাররা জানান দিলেন, সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এখন তাদের।

ল্যাপ অব অনার দিলেন সাগরিকা, হাতে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা আর ফিলিস্তিনের পতাকা। যে সাগরিকা তিন ম্যাচ পর ফিরেছেন, তিনিই একাই নেপালের জালে জড়িয়েছেন চারটি গোল। এই জাদুকরী পারফরম্যান্সই নিশ্চিত করল বাংলাদেশের অপরাজিত চ্যাম্পিয়নশিপ। অঘোষিত ফাইনালে ড্রই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ ড্র’কে নয়, বেছে নিল দাপুটে জয়। হিমালয়কন্যারা যেন এক সাগরিকার কাছেই হার মানল।

টুর্নামেন্টের শুরুতেই শ্রীলংকার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন সাগরিকা। এরপর নেপালের বিপক্ষেও এক গোল। কিন্তু সেই ম্যাচেই এক নেপালি খেলোয়াড়ের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই নিষেধাজ্ঞার কালো অধ্যায় পেছনে ফেলে কাল কিংস অ্যারেনায় ফিরে এলেন তিনি, আরও পরিণত, আরও ভয়ঙ্কর রূপে।

আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময়কালে সাগরিকা ব্যক্তিগতভাবে তার ফিটনেস এবং মানসিক দৃঢ়তার উপর কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এই বিরতি যেন তাকে আরও শাণিত করেছে। ফিরে এসেই নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সহ চার গোল করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি দলের সেরা তারকা। এই চার গোলের সুবাদেই টুর্নামেন্টে তার মোট গোল সংখ্যা দাঁড়াল আট, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। যদি নিষেধাজ্ঞায় না পড়তেন, তবে হয়তো সর্বোচ্চ গোলদাতার সোনালি বুটও তার হাতেই শোভা পেত। নেপালের পূর্ণিমা রায় ১০ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন।

পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে কিংস অ্যারেনা মূল ভেন্যু না হলেও, এই অঘোষিত ফাইনাল দেখতে হাজার হাজার দর্শক মাঠে এসেছিলেন। তাদের উপস্থিতি আর গর্জনই যেন খেলোয়াড়দের বাড়তি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ছিল আক্রমণাত্মক। অষ্টম মিনিটেই প্রথম গোল আসে সাগরিকার পা থেকে। মিডফিল্ড থেকে আসা এক ডিফেন্স চেরা পাস পেয়ে নেপালের ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যান তিনি। গোলকিপার সুজাতা তামাংকে বোকা বানিয়ে প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান (১-০)। এই গোল যেন নিষেধাজ্ঞার জ্বালা মেটানোর প্রথম ধাপ ছিল।

দ্বিতীয়ার্ধে এসে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় বাংলাদেশ। ৫১ মিনিটে আবারও সাগরিকার জাদু। তার পা থেকে আসে দলের দ্বিতীয় গোল (২-০)। মিনিট সাতেক পর সতীর্থের লং পাস পেয়ে গোলকিপার সুজাতার মাথার ওপর দিয়ে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বল জালে জড়িয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন (৩-০) সাগরিকা। ৭১ মিনিটে তার আরেকটি গোল অফসাইডে বাতিল হলেও, ৭৭ মিনিটে মুনকি আক্তারের ক্রসে অসাধারণ এক শটে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন (৪-০) সাগরিকা। এই গোলই নেপালের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়।

এই শিরোপা বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য এক নতুন মাইলফলক। সিনিয়র দল থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিনিয়ত নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে চলেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং সঠিক প্রশিক্ষণের ফলস্বরূপই এমন সাফল্য আসছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা ভবিষ্যতে বিশ্ব মঞ্চেও নিজেদের দ্যুতি ছড়াবে।

এই আনন্দের দিনেও দেশ শোকের আবহে ডুবে ছিল। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ও নেপালের ফুটবলাররা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এই নীরবতা জানান দিচ্ছিল, খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, এটি মানবিকতারও এক প্রতীক।

  • চ্যাম্পিয়ন: বাংলাদেশ (১৮ পয়েন্ট)

  • রানার্সআপ: নেপাল (১২ পয়েন্ট)

  • ফেয়ার প্লে: শ্রীলংকা

  • সেরা গোলকিপার: মিলি আক্তার (বাংলাদেশ)

  • টুর্নামেন্টসেরা: মোসাম্মাত সাগরিকা (বাংলাদেশ)

  • সর্বোচ্চ গোলদাতা: পূর্ণিমা রায় (১০ গোল-নেপাল)