আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহার বা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের অন্যতম এক অসামান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপালের (৭৮১–৮২১ খ্রি.) সময়ে নির্মিত এই বিশাল বিহার একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যশৈলী
পাহাড়পুর বিহারকে ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো তাদের 'বিশ্ব ঐতিহ্য' তালিকায় যুক্ত করে, যা এর আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে তুলে ধরে। আজো সেখানে ইটের তৈরি কেন্দ্রীয় মন্দির, ১৭৭টি ভিক্ষু কক্ষ, স্নানাগার, শৌচাগার, পোড়ামাটির ফলকচিত্র এবং প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক কাঠামোর দেখা মেলে। মন্দিরের দেয়ালে পাওয়া গেছে দুই হাজারের বেশি পোড়ামাটির ফলক, যেখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ মূর্তি ও চিত্রকল্প খোদাই করা রয়েছে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে পাহাড়পুর বৌদ্ধ ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। তৎকালীন সময়ে তিব্বত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে ধর্মচর্চা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য আসতেন।
বিহারের মূল বেষ্টনী ৯২২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯১৯ ফুট প্রস্থের। এর ভেতরে রয়েছে একটি বিশাল মন্দির, যার উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট। বিহারের বাইরের দিকে রয়েছে সত্যপীরের ভিটা ও সন্ধ্যাবতীর ঘাট, যা নানা জনশ্রুতি ও ইতিহাস ধারণ করে আছে।
আবিষ্কার ও খননকাজ
১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম প্রথম এই স্থাপনাটি আবিষ্কার করেন। পরে ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র গবেষণা পরিষদ এবং ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ যৌথভাবে এর পূর্ণাঙ্গ খননকাজ শুরু করে।
ভ্রমণ ও স্থানীয় আকর্ষণ
ঢাকা থেকে প্রায় ২৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাহাড়পুর বিহারে নওগাঁ কিংবা জয়পুরহাট জেলা হয়ে সহজেই যাওয়া যায়। নিকটবর্তী জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। পর্যটকদের জন্য বিহারের প্রবেশপথে রয়েছে সাধারণ মানের খাবার হোটেল। আর নওগাঁর বিখ্যাত সন্দেশ এখানে ভ্রমণে আসা কারো মিস করা উচিত নয়।